প্রতিনিধি, খুলনা প্রকাশের সময় :৫ এপ্রিল, ২০২২ ৬:৩০ : অপরাহ্ণ
এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মেয়ে সুমাইয়া মোসলেম মীম। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ২৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন মীম।
আজ মঙ্গলবার দেশের মেডিকেল কলেজ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
মিম খুলনা নগরীর ডুমুরিয়ায উপজেলার মৌলভীপাড়া বাউন্ডারি রোড এলাকার মো. মোসলেম উদ্দিন সরদারের মেয়ে।
মীম ২০১৯ সালে যশোর বোর্ডের অধীনে খুলনার ডুমুরিয়া গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০২১ সালে খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল (এম এম) সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুই পরীক্ষাতেই তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
মীমের বাবা খুলনার ডুমুরিয়া কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সরদার। মা খাদিজা খাতুন কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট।
চিকিৎসক হওয়ার কোনো আগ্রহ ছিল না সুমাইয়ার। তবে মায়ের প্রবল ইচ্ছার কারণে মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। ওই প্রস্তুতিতে সাফল্য ধরা দিয়েছে তার।
সুমাইয়া মোসলেম মীম বলেন, ‘আমি কল্পনা করিনি দেশসেরা হবো। এত বেশি প্রত্যাশা ছিলো না। তারপরও দেশসেরা হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আমার ফলাফলের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে আমার বাবা-মা। বিশেষ করে প্রতিদিন কেশবপুরে যাওয়া-আসা করা মায়ের জন্য ছিলো খুবই কষ্টের। আমার জন্য এই কষ্ট তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। ফলাফল পেয়ে তাদের মুখের হাসিই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
মীম বলেন, ‘ছোটবেলায় চিকিৎসক হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না। শুধু আম্মুর ইচ্ছার জন্যই মেডিকেলের পড়াশোনা করেছি। এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গা। সবার আগে এখন একজন ভালো মানুষ হতে চাই। এরপর একজন ভালো চিকিৎসক হতে চাই। আমাদের সমাজের মানুষের একটা খারাপ ধারণা রয়েছে, চিকিৎসক মানেই কসাই। এই ধারণা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে মীম বলেন, ‘সবার আগে কষ্ট করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এরপর ডাক্তার হওয়ার জন্য বুঝে পড়াশোনা করতে হবে। সবাই ভাবে মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু না, যা পড়ছো সেই বিষয়টা পরিষ্কার বুঝতে হবে। মুখস্ত করলে পরদিন ভুলে যেতে পারো। কিন্তু বুঝে পড়লে সেটা কাটিয়ে ওঠা যায়। কোচিংয়ের অনেক পরীক্ষায় ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারতাম না। তারপরও বুঝে পড়ার কারণে ফলাফল ভালো হতো।’
মীমের বাবা মোসলেম উদ্দিন সরদার বলেন, ‘গ্রাম থেকে লেখাপড়া করে এতো ভালো করবে এটা ভাবতেই পারিনি। অনেক আনন্দ লাগছে, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। মীমের মা সারাদিন চাকরি করে প্রায় সাররাত ওর পাশে জেগে বসে থাকতো। এতোদিনের কষ্টের শেষে ওদের আনন্দেই আমার বুক ভরে যাচ্ছে।’
মীমের মা খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমার জীবনে একটাই চাওয়া ছিলো আমার মেয়ে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। সেই চাওয়া এখন পূরণ হতে চলেছে। ভাবতে পারিনি এতো ভালো ফলাফল করবে।’
প্রসঙ্গত, এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪২ জন পরীক্ষার্থী। পাসের হার ৫৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।