নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২ এপ্রিল, ২০২২ ৪:৩৯ : অপরাহ্ণ
তিন থেকে চার মাস আগে রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
যার অংশ হিসেবে বিকাশ প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম কিলার সুমন শিকদার মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।
এরপর ১২ মার্চ দুবাই চলে যান মুসা। সেখান থেকেই তিনি কিলিং মিশনের সমন্বয় করেন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা টিপু (৫৪)। সে সময় সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন টিপুকে বহন করা মাইক্রোবাসের চালকও।
এ হত্যার ঘটনায় যুক্ত থাকায় গত ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ৩১ মার্চ আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরেকজনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তারা হলেন-মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৫২), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮) ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)।
হত্যার মোটিভ প্রসঙ্গে র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা তার সহযোগী ছিলেন। এ ঘটনায় টিপু জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করতেন তারা।ওই সময় মিল্কী হত্যায় যে মামলা করা হয়, তাতে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন টিপু। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রমে তার নাম বাদ পড়ে।এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মনে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজি, স্কুল-কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তার নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। মূলত এসবকে কেন্দ্র করেই টিপুকে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের আরেকটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দলটি ২০১৬ সালে রিজভী হাসান ওরফে ‘বোঁচা বাবু’কে হত্যা করে। বাবু ছিলেন টিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাবু হত্যা মামলায় পুলিশ গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে তিনজন ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ের অপেক্ষায় আছে। মামলার আসামিদের মনে ভয় ছিল, মামলাটি যদি দ্রুত গতিতে চলে তাহলে তাদের ফাঁসির রায় হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তারা টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরও বলেন, নাসির ও ওমর ফারুক টিপুকে হত্যা করার জন্য কিলার মুসাকে দায়িত্ব দেয়। এ ছাড়া কাইল্লা পলাশের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীও টিপুকে হত্যার বিষয়টি জানায়। পরে তারা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট দেয়। যেখানে কিলিং মিশনে দায়িত্ব পরে মুসার ওপর। সমন্বয়কারী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে শুটার ঠিক করেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে গোপনে দুবাই চলে যায় কিলার মুসা। সেখানে বসেই পরিকল্পনা সাজান। কিলার মুসা নিজেও বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামি।
দুবাই যাওয়ার পরে মুসা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শুটার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। নাসির, ওমর ফারুক ও কাইল্লা পলাশের কাছ থেকে সব সময় আপডেট নিয়েছে মুসা।
হত্যাকাণ্ডে চুক্তিকৃত ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ৯ লাখ টাকা ওমর ফারুক দেয়। আর বাকি ৬ লাখ টাকা মুসা নাসিরের কাছ থেকে নিয়েছে।
মুসা বিদেশ যাওয়ার সময় ৫ লাখ টাকা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে তার কাছে আরও চার লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আসামিরা র্যাবকে জানিয়েছে তারা হত্যাকারী ও সহযোগীকে চেনেন না। হত্যাকারীকে ভাড়া করা থেকে শুরু করে হত্যার যাবতীয় পরিকল্পনার সমন্বয়কারী মুসা। হত্যাকাণ্ডের দিন নাসির ও পলাশ এজিবি কলোনি থেকে টিপুকে অনুসরণ করেছেন। আর ওমর ফারুকও শাহজাহানপুর এলাকায় ছিলেন। টিপুর গতিবিধি তাৎক্ষণিকভাবে মুসাকে জানিয়েছেন তারা। আর মুসা সে আপডেট জানিয়েছেন হত্যাকারীদের। টিপুকে গুলির করার পর নাছির দুবাইতে অবস্থানরত মুসাকে মেসেজ দেয়-‘ইট ইজ ডান’।