রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রামের লালখান বাজারে মাসুম ও বেলাল আবার মুখোমুখি, নেপথ্যে… 


নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৯ মার্চ, ২০২২ ১২:৪৪ : অপরাহ্ণ
দিদারুল আলম মাসুম ও আবুল হাসনাত মো. বেলাল
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত মো. বেলাল আবার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন।

দুই নেতার বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে লালখান বাজার এলাকায় দুপক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই নেতার চারজন কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় নগরীর খুলশী থানায় মাসুমের অনুসারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে বেলালের এক অনুসারী। এতে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দুটি ঘটনা নিয়ে দিদারুল আলম মাসুম ও আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারীরা ফেসবুকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এর জের ধরে সোমবার রাতে দুপক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘাত বাধে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালখান বাজার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দিদারুল আলম মাসুম লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। আবুল হাসনাত মো. বেলাল ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সদ্য ঘোষিত নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।

মাসুমের সাথে বেলালের দীর্ঘ দিন ধরে ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক। লালখান বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দফায় দফায় সংঘাত চলে আসছে।

হঠাৎ কী কারণে আবার মুখোমুখি অবস্থানে দুই নেতা

দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী আর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ছিলেন প্রধান বক্তা।

ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত মো. বেলালও।

ওই অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর বেলালকে কাছে পেয়ে তার দিকে চোখ রাঙিয়ে অভিযোগের তীর ছুঁড়েন দিদারুল আলম মাসুম। তিনি তার বক্তব্যে রেশন কার্ড বণ্টন নিয়ে কাউন্সিলর বেলালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন।

দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘লালখান বাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যখন আমার কাছে এসে বলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ন্যায্যমূল্যের রেশন কার্ড আমাদেরকে দেওয়া হয় না। আজকে গেলে বলে কালকে, কালকে গেলে বলে মহিলা কাউন্সিলরের কাছে যান। মহিলা কাউন্সিলরের কাছে গেলে বলে আপনারা পুরুষ কাউন্সিলরের কাছে যান।’

এসময় মঞ্চে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পেছনে বসা ছিলেন কাউন্সিলর বেলাল। এই অভিযোগের কথা শুনে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে মাসুমের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে আপত্তি জানান।

তিনি আ জ ম নাছিরের কাছেও নালিশ দেন। তখন আ জ ম নাছির মাসুমকে এসব কথা বলতে বারণ করেন।

এ সময় দিদারুল আলম মাসুম বলে উঠেন, ‘কথাগুলো কিন্তু সত্য। সে কথাগুলো আমাকে বলতে হবে। একজন কাউন্সিলরের কাছ থেকে আমি হয়তো ব্যাখ্যা পাবো না, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু একজন কাউন্সিলর হাজার হাজার জনগণকে কখনো দাবায় রাখতে পারবে না।’

এ সময় মঞ্চে মাসুমের সাথে বেলালের কথা কাটাকাটি হয়। দুই নেতার বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আ জ ম নাছির বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ রাতে লালখান বাজারে দিদারুল আলম মাসুমের ফ্ল্যাটে হংকং প্রবাসী এক যুবকের ওপর হামলা হয়।

রেশন কার্ড ও হংকং প্রবাসী যুবকের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে মাসুম ও বেলালের অনুসারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ট্রল করেন।

এ দুটি ঘটনার জের ধরে সোমবার রাতে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলাল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সংঘর্ষ নয়, আমার কর্মীদের ওপর একতরফা হামলা চালিয়েছেন মাসুমের অনুসারীরা। ইসমাইল নামে হংকং প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে সিগারেট খাওয়া নিয়ে মাসুমের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই যুবক মাসুমকে ঘুষি মারেন। পরে মাসুম তার লোকজন ডেকে এনে ওই যুবককে মারধর করে মাথা ফেটে দিয়েছে।’

তিনি জানান, সোমবার রাতে আমার কর্মী আরিফ, বাবু ও তানভীর লালখান বাজারের বাসায় ফিরছিল। এসময় মাসুমের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ওপর লাঠি, কোদাল নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় তিনজনই আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত তানভীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বেলাল বলেন, ‘রেশন কার্ড নিয়ে কথা বলার উনি (মাসুম) কে? লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক আহমেদকে জিজ্ঞাসা করেন, উনি রেশন কার্ডের ফরম পেয়েছেন কিনা? নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন, উনি রেশন কার্ডের ফরম পেয়েছেন কিনা? আমি ওই দিন মিটিংয়ে বলেছি, যাদেরকে রেশন কার্ডের ফরম দিয়েছি তাদের নাম বললে এখানে সবাই লজ্জা পাবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমার কোনো কর্মী নেই, সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। কী কারণে সংঘর্ষ হয়েছে আমি বলতে পারবো না। এটা পুলিশ বলতে পারবে।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লালখান বাজার ওয়ার্ডে ৫ হাজার রেশন কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনটি ইউনিটের আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেউ কার্ড পায়নি। এসব কার্ড কোথায় গেলো? কর্মীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ কার্ড বণ্টন হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু ২০ শতাংশ কার্ডও বণ্টন হয়নি।’

আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর