নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৫ মার্চ, ২০২২ ৮:১০ : অপরাহ্ণ
ব্যস্ত সড়কে মাত্র ২০ সেকেন্ডেই ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে।
ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, যানজটের মধ্যেই হেলমেট পরা এক দুর্বৃত্ত মাত্র দুই থেকে তিন ফুট দূরত্বে মাইক্রোবাসের সামনের আসনে বসা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে মুহূর্তেই রাস্তা পেরিয়ে চলে যায়।
এ হত্যার ঘটনা একটি পরিকল্পিত মিশন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে আমতলা মসজিদ এলাকায় দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন টিপু। এ সময় তার গাড়ির চালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন।
একই ঘটনায় নিহত হন সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি (২২)।
ঘটনাস্থল থেকে ১২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঘটনার সময় টিপুর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন তার বন্ধু মিজানুর রহমান। নিজ চোখেই পুরো ঘটনাটি দেখেছেন।
আজ শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে তিনি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন।
মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমাদের মাইক্রোবাস তখন যানজটে আটকে ছিল। এ সময় হঠাৎ মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত এসে মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তবে কে গুলি ছুড়ছিল তা আমরা দেখিনি। টিপু ভাই চালকের পাশে বসা ছিলেন। আর আমরা দুজন ছিলাম পেছনে। শুধু বৃষ্টির মতো গুলি আসছিল, আমরা কিছু বুঝতে পারিনি, কাউকে চিনতেও পারেনি। গাড়ির দরজার গ্লাসের ওপর দিয়ে গুলি ছুড়া হয়, গুলি গ্লাস ভেদ করে টিপু ভাইকে বিদ্ধ করে। এ সময় গাড়ির চালক মুন্নার হাতেও গুলি লাগে। তখন মুন্না এক হাতে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যায়, পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি।
তিনি জানান, এলোপাতাড়ি গুলি করে ওই দুর্বৃত্তরা মুহূর্তেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এই পুরো ঘটনা ঘটেছে মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই কিলিং মিশনে অংশ নেন দুজন। মোটরসাইকেলে আসেন তারা। তাদের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক ছিল। ওই দুজনের একজন চালক, অন্যজন পিস্তলধারী।
পুলিশ বলছে, হত্যাকারী অস্ত্র চালনায় খুবই দক্ষ ও পেশাদার। কারণ, প্রকাশ্যে ব্যস্ত সড়কে স্বল্প সময়ে এতো গুলি ছোড়া মুখের কথা নয়। তার ছোড়া ১২ রাউন্ড গুলির ১০টিই টিপুর শরীরে লাগে।
এ ঘটনায় আজ শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করেছেন।
টিপুকে ৪-৫ দিন আগে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তার স্ত্রী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহী খুনি আগে থেকেই টিপুর গাড়িকে অনুসরণ করে আসছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, রাতে ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো চ-২০-০৩৮০) বাসার দিকে যাচ্ছিলেন টিপু। খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ের আগের সিগন্যালে আটকে ছিল তার গাড়ি। তখন মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে মুহূর্তের মধ্যে অনবরত গুলি চালায়। এতে তিনি ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পাশের রিকশায় থাকা এক তরুণীও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক টিপু ও ওই তরুণীকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, জাহিদুল ইসলাম যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অনেক দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। পরে জামিনে মুক্ত হন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড নামের একটি বিপণিবিতানের সামনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জাহিদুলের বাসা খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায়। মতিঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং ফুটপাতে দোকান বসিয়ে বাণিজ্য করা নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল বলে জানা গেছে।