রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ মার্চ, ২০২২ ৭:০৮ : পূর্বাহ্ণ
ম্যাচ জিতলে মুখোমুখি হতে হতো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপ খেলার আশা জিইয়ে থাকার সম্ভাবনা ছিলই ইতালির।
কিন্তু কে ভেবেছিলেন পুঁচকে উত্তর মেসিডোনিয়াই বিদায় করে দেবে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তের অসাধারণ এক গোলে ঘরের মাঠেই ইতালিকে বিশ্বকাপে দর্শক বানিয়ে দিলো মেসিডোনিয়া।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল আজ্জুরিরা।
পালের্মোর স্তাদিও রেঞ্জো বারবেরায় বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রি প্লে-অফ ম্যাচে ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে উত্তর মেসিডোনিয়া।
ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন আলেকজান্ডার ত্রাজকভস্কি।
একই সময়ে দিনের অপর ম্যাচে তুরস্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে রোনালদোরা। ফলে প্লে অফের ফাইনালে মেসিডোনিয়ার প্রতিপক্ষ পর্তুগাল।
আরও পড়ুন: তুরস্কের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখলো পর্তুগাল
মেসেডোনিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকেই দাপুটে খেলেছে ইতালি। বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল তারাই। তবে ৩২টি শট নিয়েও গোলের দেখা পায়নি তারা।
অসাধারণ রক্ষণ শৈলী উপহার দিয়ে ইতালিয়ান ফরোয়ার্ডদের আটকে রাখেন মেসিডোনিয়ার ডিফেন্ডাররা। মাত্র ৪ শটের ২টি লক্ষ্যে রেখেই গোল আদায় করে নেয় দলটি।
এক সময় ইতালির খেলার মূল ধরণ ছিল রক্ষণাত্মক। প্রতিপক্ষ যেমনই হোক রক্ষণ জমাট রেখে প্রতিপক্ষকে খেলিয়ে পাল্টা আক্রমণে যেত দলটি।
তবে রবার্তো মানচিনির অধীনে দলটি চিরাচরিত খেলার ধরণ ছেড়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে।
অন্যদিকে ইতালির পুরনো ধরণ নিয়ে যেন এদিন খেলতে নামে মেসিডোনিয়া। আর তাতেই সাফল্য মিলে দলটির।
এদিনের ঘটনা ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের আগে সুইডেনের বিপক্ষে খেলা সেই ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দেয় ইতালিয়ানদের। সেবার একের পর এক আক্রমণ করেও কোনো গোল পায়নি ইতালিয়ানরা। বাদ পড়ে যায় বিশ্বকাপ থেকে।
এবারও একই চিত্র। শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ। একই সঙ্গে একের পর এক মিস। একটু উল্টো করে বলা যায় জমাট রক্ষণে ইতালিকে আটকে দিল মেসিডোনিয়া।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এমারসনের দূরপাল্লার লক্ষ্যভ্রষ্ট প্রচেষ্টা দিয়ে শুরু। এরপর মুহুর্মুহু আক্রমণ। কিন্তু ডি-বক্সেই গিয়েই খেই হারিয়েছে ইতালির আক্রমণভাগ। মেসিডোনিয়ার রক্ষণ দুর্গ ভাঙতে ব্যর্থ হয় দলটি।
২৯তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক মিস করেন ডোমেনিকো বেরার্দি। ফাঁকা পোস্টেও বল জালে পাঠাতে পারেননি। অবশ্য মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক স্তল দিমিত্রিভস্কির মারাত্মক ভুলে একে ফাঁকা পোস্ট পান এ সাসসুওলো ফরোয়ার্ড।
কিন্তু দুর্বল এক শট নেওয়ায় দৌড়ে গিয়ে বল ধরে ফেলতে সক্ষম হন গোলরক্ষক।
সুযোগ ছিল পরের মিনিটেও। মার্কো ভেরাত্তির বাড়ানো বল ধরে ভালো শট নিয়েছিলেন চিরো ইম্মোবেলে। তবে দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে তার শট ঠেকান মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক।
৩৮তম মিনিটে গোলমুখ থেকে ভেরাত্তির শট ঠেকান এ মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক। ফিরতি বলে ইম্মোবেলের নেওয়া শট ঠেকান তারা।
পরের মিনিটে উল্টো গোল হজম করতে পারতো ইতালি। মাঝমাঠে এক ইতালিয়ান খেলোয়াড় বল হারালে বল পেয়ে যান মিলান রিস্তোভস্কি। এগিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান তিনি।
তবে অসাধারণ এক ট্যাকলে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন ফ্লোরেঞ্জি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পাল্টা আক্রমণ থেকে সুযোগ ছিলও দলটির।
তবে আলেকজান্ডার ত্রাজকভস্কির দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা।
৫২তম মিনিটে বেরার্দির আরও একটি দূরপাল্লার প্রচেষ্টা রুখে দেন মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক। পরের মিনিটে ইম্মোবেলের শট ব্লক করেন এক ডিফেন্ডার।
৫৮তম মিনিটে আরও একটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন সেই বেরার্দি। ফাঁকায় বল পেয়েও উড়িয়ে মারেন।
৬৩তম মিনিটে আরও একটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন বেরার্দি। ভেরাত্তির থ্রু পাস ছোট ডি-বক্সে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি তিনি।
পরের মিনিটে ইম্মোবেলের নেওয়া কোণাকোণি শট ঠেকান মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক। ৬৭তম মিনিটে কর্নার থেকে ফাঁকায় হেড নিয়েছিলেন আলেসান্দ্রো বাস্তোনি। তবে গোলরক্ষক বরাবর হওয়ায় তা লুফে নিতে কষ্ট হয়নি দিমিত্রিভস্কির।
৭২তম মিনিটে ফ্লোরেঞ্জির শট ব্লক না করলে গোল পেতে পারতো ইতালি। সাত মিনিট পর তো দুর্দান্ত এক সেভ করেন মেসিডোনিয়া গোলরক্ষক। বদলি খেলোয়াড় জিয়াকোমো রাসপাদোরি ফাঁকায় পেয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
৮৫তম মিনিটে তো গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান বদলি খেলোয়াড় পেল্লেগ্রিনি। কিন্তু তার শট লক্ষ্যেই থাকেনি।
উল্টো ম্যাচের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে ইতালিয়ানদের স্তব্ধ করে দেন ত্রাসকভস্কি। গোলরক্ষকের উড়িয়ে মারা বল ইতালিয়ান ডিফেন্ডাররা ঠেকাতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান বদলি খেলোয়াড় বোজান মিয়ভস্কি।
তার বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট জাল খুঁজে নিলে উল্লাসে মাতে মেসিডোনিয়ানরা।
এরপর ম্যাচের শেষ মুহূর্তেও গোল করার দারুণ সুযোগ ছিল ইতালিয়ানদের। ফ্লোরেঞ্জির শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর আরেক বদলি খেলোয়াড় জোয়াও পেদ্রোর শটও লক্ষ্যে থাকেনি।
ফলে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় আজ্জুরিদের।