বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

ইভিএমে না, নির্বাচনকালীন সরকার চান বিশিষ্ট নাগরিকরা


বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২২ মার্চ, ২০২২ ৬:৪৫ : অপরাহ্ণ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা থাকার পক্ষে মত দেন তারা।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পর নানা অনিয়ম ও ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের পর যে বিতর্ক উঠেছে, তাতে সংশয় প্রকাশ করে বিশিষ্টজনরা বলছেন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করলেই ভালো।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেন ১৯ জন।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল।

সংলাপে বিশিষ্টজনরা জাতীয় নির্বাচনে সবার ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, ভোটারদের বাধাহীনভাবে ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করা, ভোটের আগে-পরে ভোটারদের বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকবে। সে নির্বাচনের ফলাফলকে নিজের পক্ষে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না অথবা কোন ধরনের উৎসাহও যোগাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এমন সরকার যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের সংবিধান এবং আইনে প্রদত্ত অধিকার কার্যকর করার কোন সুযোগ নাই।’

ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ইসির উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবেন আপনারা। প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।’

ইভিএমের ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে জাতীয় ঐক্যমতের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তিনি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ইভিএম নিয়ে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে দিতে পারে। ইভিএম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিনা টেন্ডারে কিভাবে ইভিএম এলো। ইভিএম নিয়ে একজনের এতো উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫-১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে, তবে এটা না হওয়াই ভালো।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলবো- ইভিএম ব্যবহার না করার জন্যে।’

সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে বেশ কিছু কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কেউ বলছে ভোট দিচ্ছে না। তবে নারায়ণগঞ্জের ইলেকশন খুব সুন্দর হয়েছে।’

১০০ শতাংশ সফলতা হয়তো কখনো সম্ভব না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘কেউ বলেছেন নির্বাচন যদি ৫০ শতাংশ ৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এটাও একটা বড় সফলতা।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এটা সত্য কথা, আমাদের সাহস থাকতে হবে। সাহসের পিছনে থাকতে হবে সততা। আমাদের হারানোর কিছু নাই। পাওয়ার কিছুও নাই। জীবনের শেষ প্রান্তে আমরা ইতিবাচক যদি কিছু করতে পারি; আপনাদের সাজেশনের আলোকে নির্বাচনটা যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সকলের অংশগ্রহণে সেটা একটা সফলতা হতে পারে।’

সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা এমিলি ও আহসান হাবীব খান সংলাপে অংশ নিয়েছেন।

দায়িত্ব নেয়ার পর অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করাটা ইসির একধরনের রেওয়াজ।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে।

সেদিন ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংলাপে এসেছিলেন মাত্র ১৩ জন। শিক্ষাবিদদের পর আজ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সংলাপ করলো ইসি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর