নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৯ মার্চ, ২০২২ ১:৪৪ : পূর্বাহ্ণ
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনও তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবার ইতিহাস পাল্টাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল টাইগাররা।
দারুণ ব্যাটিংয়ে শক্ত ইনিংস গড়ে দিয়েছেন সাকিব, লিটন ও ইয়াসিররা। বল হাতে বাকি কাজ সেরেছেন তাসকিন, শরিফুল ও মিরাজরা।
দুই বিভাগের দাপুটে দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে ৩৮ রানে হারিয়েছে লাল-সবুজের দল।
আজ শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্কে সাকিব, লিটন ও ইয়াসিরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৩১৪ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায়।
৩১৫ রান তাড়া করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার ভেঙে দিয়ে বল হাতে শুরুটা স্বপ্নের মতো করে বাংলাদেশ।
তবে বড় লক্ষ্য নিয়েও মাঝপথে লড়াইটা কঠিন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের।
৩৬ রানে তিন উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা চতুর্থ জুটিতে পায় ৮৫ রানের শক্ত ইনিংস।
তাদের ইনিংস মেরামত করতে গিয়ে বাংলাদেশকে বেশ ভোগান রাসি ফন ডার ডাসেন ও তেম্বা বাভুমা।
জমে যাওয়া এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান শরিফুল। তেম্বাকে ৩১ রানে বিদায় করেছেন তিনি।
তেম্বার বিদায়ের পর রাসি ফন ডার ডাসেনকে আউট করেন তাসকিন। ৯৮ বলে ৮৬ রান করা ফন ডার ডাসেনকে দারুণ ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন ইয়াসির।
তবে দুজন ফিরলেও বাংলাদেশের সমীকরণ কঠিন করে তোলে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার। ফের বাংলাদেশকে ভোগান ডেভিড মিলার।
৭৯ রানে তার ঝড় থামান মিরাজ। মিলার ফিরলে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন হয়নি।
৩১৫ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার আগেই ২৭৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পক্ষে পক্ষে মিরাজ ৪, তাসকিন ৩ এবং শরিফুল নেন ২ উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রানের জন্য বেশ লড়াই করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
দুজনে মিলে উইকেটে টিকে থাকেন লম্বা সময়। ওপেনিং জুটিতে দুজন মিলে গড়েন ৯৫ রানের জুটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যেটা ওপেনিং জুটিতে তো বটেই যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড।
ইনিংসের ২২তম ওভারের তৃতীয় বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়েন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
ফিল্ড আম্পায়ারের আউট দেওয়ার বিপরীতে রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি তিনি। বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ফেরেন ৬৭ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান করে।
তামিম ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকলেন না লিটন দাসও। পরের ওভারেই হাফসেঞ্চুরি করে তিনিও ফেরেন সাজঘরে। তাকে বিদায় করেন কেশব মাহারাজ।
তামিমের সমান ৬৭ বল খেলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫০ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
দুই ওপেনার ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব ও মুশফিক।
তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মুশফিককে ফিরিয়ে ২০ রানে এই জুটি ভাঙেন কেশব। ১২ বলে ৯ রান করা মুশফিককে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান কেশব।
ভালো শুরু করা বাংলাদেশ ২৯ রানে পরপর ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়।
দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে ওই চাপ সামাল দেন সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির রাব্বি।
একের পর এক বিতর্ক ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়া বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর তাণ্ডব চালান।
তিনটি ছক্কায় যেন সব বিতর্ক মাঠের বাইরে আঁছড়ে ফেলেন। ইয়াসির আলি রাব্বির সঙ্গে তিনি গড়েন ১১৫ রানের জুটি।
তবে লুঙ্গি এনগিডি বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ব্যক্তিগত ৭৭ রানে সাজঘরে ফিরেন তিনি।
৬৪ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান সাকিব।
সাকিব সাজঘরে ফেরার আগেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফিফটি করেন ইয়াসির।
৪৩ বলে ঠিক ৫০ ছুয়েই আউট হন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। রাব্বির ইনিংসে চারটি চার ও দুই ছক্কার মার ছিল।
পরে আফিফ হোসেন ১৩ বলে এক চার ও এক ছয়ে ১৭ ও মাহমুদুল্লাহ ১৭ বলে এক ছয় ও এক চারে ২৫ রান করেন।
মেহেদি মিরাজ ১৩ বলে দুই ছক্কায় ১৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মার্কো জানসেন ও কেশব মহারাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯ , তাসকিন ৭; কেশব ১০-০-৫৬-২, রাবাদা ১০-০-৫৭-১, এনগিডি ১০-১-৭৫-১, ফেলুকওয়ায়ো ১০-১-৬৩-১, মার্কো ১০-১-৫৭-২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬/১০ (বাভুমা ৩১, মালান ৪, মারক্রাম ০, মিলার ৭৯, এনগিডি ১৫, আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো ২, রাবাদা ১, কেশব ২৩, ফন ডার ডাসেন ৮৬, কাইল ভেরেইনা ২১; তাসকিন ১০-১-৩৬-৩, সাকিব ১০-০-৫৪-০, শরিফুল , মাহমুদউল্লাহ ১.৫-০-২৪-১, মুস্তাফিজুর ১০-০-৫০-০, মিরাজ ৯-০-৬১-১)।
ফল: ৩৮ রানে জয়ী বাংলাদেশ।