নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৩ মার্চ, ২০২২ ৮:৫৪ : পূর্বাহ্ণ
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ৫৯১ জন নিহত হয়েছেন।
এসব ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে প্রথমে রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের নাম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের গুলিতেও মানুষ নিহত হয়েছে। আট জেলা বাদে গোটা বাংলাদেশেই সরকারি ভাষ্যমতে, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে।
গতকাল শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘নির্বিচার প্রাণনাশ? বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে ওয়েবিনারে জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সিজিএসের কয়েকজন গবেষক এ গবেষণায় অংশ নেন।
আইনবহির্ভূত এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনুশীলনের গুরুতর পরিণতি বোঝার জন্য এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, ২০১৯-২০২১ পর্যন্ত তিন বছরের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এতে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঘটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর্যালোচনা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দুকযুদ্ধের ক্ষেত্রে পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্টতা আছে ২৩৫টি ঘটনায় এবং র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে ১৫৬টি ঘটনায়।
তিনি বলেন, ‘আদালতের সঠিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ৫১২, ক্রসফায়ার ৪, গোলাগুলি ১৫, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ১৫, গুলি করে হত্যা ৩৪ এবং নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।’
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হেফাজতে মৃত্যুর ১৭টি ঘটনা ঘটলেও গুলি করে হত্যা, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ে। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
ওয়েবিনারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৫ মে ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এই সময়কালে কোনো কোনো জেলায় দিনে একজনের বেশিও নিহত হন। গবেষকেরা সময় বেঁধে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচারের সুপারিশ করেছেন।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রধান নির্বাহী আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ‘আইনের প্রতি অনাস্থা থেকে মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করছে। আদালত, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করা না গেলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না।’
সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সবাই যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন বিষয়টি এমন নয়। ট্রাকের সামনে ফেলে দেওয়ার ঘটনা আছে। এসব ঘটনার কোনো তদন্ত হয় না। জীবনের অধিকার, মানবাধিকার, কথা বলার অধিকার না থাকলে কোনো উন্নয়নই উন্নয়ন নয়।’
ওয়েবিনার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি সরকারকে পাঠানো হবে এবং এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’