রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৯ মার্চ, ২০২২ ৭:০১ : পূর্বাহ্ণ
শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার চাপে মাথা নত করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চান জেলেনস্কি। এজন্য যদি ক্রিমিয়া দ্বীপ এবং সদ্য রুশ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ডের দুই দেশ দনেতস্ক ও লুহানস্ক প্রশ্নে আপস করতে হয়, তাতেও রাজি তিনি।
তবে এ আপসকে আত্মসমর্পন হিসেবে দেখাতে রাজি নন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এ বার্তা দিয়েছেন।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে বেলারুশের গোমেল শহরে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন রাশিয়া ও ইউক্রেন সরকারের প্রতিনিধিরা।
সর্বশেষ সোমবার তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে।
সেই বৈঠকে চলমান অভিযান বন্ধে কিয়েভকে কিছু শর্ত দিয়েছে মস্কো।
এগুলো হলো-ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না ইউক্রেন, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের অংশ বলে ইউক্রেনকে স্বীকার করতে হবে এবং দনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
এসব শর্ত দেওয়ার এক দিনের মধ্যেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে বুঝতে পেরেছি, ন্যাটো আসলে ইউক্রেনকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। এই সামরিক জোট বিতর্কিত কোনো বিষয়ে জড়াতে চায় না এবং রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতে ভয় পায়। ’
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা যে নতজানু হয়ে ন্যাটোর সহযোগিতা চাইব, ব্যাপারটি এমন নয়। ইউক্রেন সে রকম কোনো দেশ নয় এবং আমিও তেমন প্রেসিডেন্ট নই।’
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের দ্বন্দ্বের শুরু সামরিক সংগঠন-ন্যাটোকে ঘিরেই। কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন।
এরপর থেকেই এই ব্যাপারটিকে ঘিরে তিক্ততা শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে।
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে-যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া এবং তার দু’দিন পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি আমার দেশ ও জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্রিমিয়া ও ডনবাস রিপাবলিকে (দনেতস্ক ও লুহানস্ককে একত্রে ডনবাস রিপাবলিক বলা হয়) রুশদের পাশাপাশি অনেক ইউক্রেনীয় এখনও বসবাস করেন। আমি আমার নিজের দেশ ও জনগণের পাশাপাশি ওই অঞ্চলগুলোতে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের নিয়েও উদ্বিগ্ন। এটা ডনবাস নামের ওই ছদ্ম প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতির চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে একটি সমঝোতায় যেতে পারি। ক্রিমিয়া ও ডনবাসে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের জানমালের নিরাপত্তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো ইউক্রেনে ফিরে আসতে চান। এসব অঞ্চলের জনগণ ও জনজীবনের নিরপত্তার স্বার্থে আপস হতেই পারে।’
এরপর নিজের অবস্থান পরিস্কার করে জেলেনস্কি বলেন, ‘তবে আমরা আত্মসমর্পণ করবো না। আমি আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি, আত্মসমর্পণের জন্য নয়।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ দিনের সামরিক অভিযানে ইউক্রেনে সাড়ে সাড়ে ৪ শ’র বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
প্রায় ২ সপ্তাহে প্রাণ বাঁচাতে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় প্রায় ২০ লাখ ইউক্রেনীয় আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে যে অনুরোধ জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট