রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা স্বাস্থ্য

দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন



ডা. মো. আবদুর রব প্রকাশের সময় :৮ মার্চ, ২০২২ ২:০১ : অপরাহ্ণ

আমাদের দেশে পেটে ব্যথা মানেই গ্যাস্ট্রিক। তাই যে কোনো কারণেই পেটের সমস্যা হোক না কেন Seclo/Loscetil/Maxpro/Sergel/Esonix/PPI/Pantonix ইত্যাদি অ্যান্টি আলসারেন্ট ওষুধ অনেকে খেয়ে থাকেন।

আমার মনে হয়, পুরো পৃথিবীতে এত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অন্য কোনো দেশে খাওয়া হয় কিনা সন্দেহ আছে।

আমাদের দেশে ফার্মেসিতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের পরেই সর্বোচ্চ বিক্রি হয় অ্যান্টি আলসারেন্ট ওষুধ (গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নামে পরিচিত)।

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন কিংবা সঠিক রোগ নির্ণয় ছাড়াই মানুষ দেদারসে এসব ওষুধ খেয়ে আসছে। ফার্মেসি থেকে সহজেই মানুষ এসব কিনতে পারে।

বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।

কিন্তু জেনে রাখা ভালো, কোনো ওষুধই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়।

প্রথমত, এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ আমরা কখন প্রেসক্রাইব করি বা কতদিনের জন্য করা হয় সেটা জানা প্রয়োজন।

আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে বলে যে লক্ষণগুলি বলি সেগুলি হচ্ছে-বুক জ্বালা পোড়া, পেটে ব্যথা, হজম না হওয়া, গ্যাস নির্গত হওয়া ও ক্ষিধা অনুভূত না হওয়া।

এসব লক্ষণগুলি সাধারণত পেপটিক আলসার ডিজিজ, নন আলসার ডিসপেপসিয়া বা গল স্টোন জাতীয় সমস্যার জন্য হয়ে থাকে।

তবে বেশীর ভাগই লাইফ স্টাইল সঠিক না হওয়ার কারণেই হয়ে থাকে। যেমন-সময়মত আহার না করা, তেল, মসলা, ভাজাপোড়া এসব বেশী খাওয়া, একেবারে পেট ভর্তি করে খাবার গ্রহণ করা, রাতের খাবার দেরীতে খাওয়া, খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাসের পাশাপাশি Endoscopy, USG এসব পরীক্ষা করা প্রয়োজন। রোগ নির্ণয় হলেই কেবলমাত্র এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ প্রেসক্রাইব করা হয়। তাও সর্বোচ্চ ৮ সপ্তাহের জন্য, এর বেশি কোনভাবেই নয়।

দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা আমাদের জানা প্রয়োজন।

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হচ্ছে ডায়রিয়া, বমি ভাব, পেটে ব্যথা।

তবে জটিল বা মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরো বেশি গ্যাস্ট্রিক তৈরি হওয়া।

এছাড়া ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এসব মিনারেল শরীরে কমে গিয়ে ফ্র্যাকচার পর্যন্ত হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়াম কমে গিয়ে হার্টের অসুখ মাংসপেশি দুর্বল হওয়া ও খিচুনি ও হতে পারে।

নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মত ইনফেকশন হতে পারে। রক্তশূন্যতাও হতে পারে।

তবে সবচেয়ে মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হলো পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে।

তাই প্রেসক্রিপশন ও রোগ নির্ণয় ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কোনমতেই উচিত নয় এবং অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খেতে হবে।

বিনা প্রয়োজনে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া এখনই বন্ধ করুন।

নিজের রোগ সম্পর্কে জানুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। প্রয়োজন ছাড়া ওষুধ খাওয়া পরিহার করুন।

সুস্থ থাকুন।

লেখক: ডা. মো. আবদুর রব
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)
মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ।
সিনিয়র কনসালটেন্ট, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল।

আরও পড়ুন:

যুদ্ধক্ষেত্রেই বিয়ে করলেন দুই ইউক্রেনীয় সেনা (ভিডিও)

চট্টগ্রামে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে বিশাল নিয়োগ, আবেদন করুন জলদি

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর