নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৬:১০ : অপরাহ্ণ
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দেখা মিলেছে লড়াকু বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ম্যাচে পারফেক্ট ক্রিকেট খেলেছে রাসেল ডমিঙ্গো’র শিষ্যরা।
কিন্তু শেষ ম্যাচে তিন বিভাগেই গড়পড়তা ক্রিকেট খেলেছে স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের বিপক্ষে একেবারেই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি লাল-সবুজের দল।
রহমতউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেসেখেলে হারালো আফগানিস্তান।
টস থেকে শুরু করে ম্যাচের শেষ অবধি একের পর এক ভুল করেছেন তামিম ইকবালরা।
যার খেসারত শুধু ম্যাচ হারে নয়, দিতে হয়েছে ওয়ানডে সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট হারিয়ে।
প্রথম ভুলটা টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া! ফ্রেশ উইকেটে ঘাস ছিলো। পেসারদের জন্য ছিলো সুবিধা।
অধিনায়ক তামিম বলেছেন, আফগানদের শক্ত পেস আক্রমণ থাকলে শুরুতে ব্যাট করতেন না।
প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখাই কাল হয়েছে দলের। অথচ তামিম উইকেটের সুবিধা টাইগার পেসারদের দিতে পারতেন।
আজ সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানদের হারাতে পারলেই প্রথমবার তাদের হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তি গড়তে পারতো তামিম ইকবালরা।
কিন্তু সেটা পারল না। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৬.৫ ওভারে ১০ উইকেটে ১৯২ রান গড়ে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন লিটন দাস।
এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫৯ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান।
রান তাড়ায় নেমে দারুণ শুরু করে আফগানরা। ওপেনিং জুটিতে দুই অতিথি ওপেনার মিলে তোলেন ৭৯ রান।
১৬তম ওভারে আফগানদের ওপেনিং জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। রিয়াজ হাসানকে ৩৫ রানে বিদায় করেন সাকিব।
রিয়াজ আউট হলেও খুব একটা চাপে পড়তে হয়নি আফগানদের।
সহজেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায় অতিথিরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১০ বলে ১০৬ রান করেন রহমতউল্লাহ গুরবাজ। রহমত শাহ করেন ৬৭ বলে ৪৭ রান।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। শুরুর জুটিতে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটনের জুটিতে আসে ৪৩ রান।
তবে তামিমের বিদায়ে আর বড় হলো না ওপেনিং জুটি।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া তামিম এবারও পারলেন না। ফিরলেন ২৫ বলে মাত্র ১১ রানে।
১১তম ওভারে ফারুকির করা বল বেরিয়ে এসে লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।
তামিমের পর দারুণ কাভার ড্রাইভে ইনিংস শুরু করেন সাকিব আল হাসান। পরের বলেই ফারুকির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন যান।
তবে রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এরপর লিটন দাসের সঙ্গে উইকেটে থিতু হয়ে যান তিনি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না ইনিংস বড় করতে। ২২তম ওভারে সাকিবকে নিজের শিকার বানান আজমতউল্লাহ।
তিন বাউন্ডারিতে ৩৬ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সাকিবের বিদায়ে ভাঙে ৬৯ রানের জুটি।
সাকিব-তামিমের বিদায়ের পর জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ছয় রানের মধ্যে পরপর আউট হন মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী রাব্বি।
রশিদ খানের বলে রহমতউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মুশফিক (৭)। এরপর টিকলেন না রাব্বি।
এই সিরিজেই অভিষেক হওয়া রাব্বি সুযোগ পেয়েছেন তিনটি ম্যাচেই। কিন্তু একটিতেও জ্বলে উঠতে পারলেন না। আজ ফিরেছেন ১ রান করে।
দ্রুত ৪ উইকেট যাওয়ার ধাক্কা সামলে দলকে তবুও এগিয়ে নেন লিটন দাস। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আজ হাফসেঞ্চুরি করেন ৬৩ বলে।
এরপর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়ার স্বাদ পেলেন না তিনি।
৩৫.৫ তম ওভারে মোহাম্মদ নবী এসেই ফেরান ডানহাতি এই ব্যাটারকে। আফগান অলরাউন্ডের বলে উড়িয়ে মারেন লিটন।
তবে সেভাবে জোর দিয়ে পারেননি। সীমানা থেকে ছুঁটে এসে দারুণ ক্যাচ নিয়ে লিটনকে সাজলের পথ দেখান জমান নাইব।
১১৩ বলে ৭ চারে ৮৬ রান করে থামেন লিটন।
ডানহাতি ব্যাটার ফেরার পর শেষ দিকে বাকিদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশকে ১৯২ রানের পুঁজি এনে দেন। ২৯ রান করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৬.৫ ওভারে ১৯২/১০ (তামিম ১১, লিটন ৮৬, সাকিব ৩০, মুশফিক ৭, ইয়াসির ১, আফিফ ৫, মাহমুদউল্লাহ ২৯, মিরাজ ৬, তাসকিন ০, শরিফুল ৭, মুস্তাফিজ ১; রশিদ ১০-০-৩৭-৩, ফারুকি ৭.৫-০-৩৩-১, মুজিব ৮-০-৩৭-০, আজমতউল্লাহ ৬-০-২৯-১, নবী ১০-০-২৯-২, নাইব ৫-০-২৫-০)।
আফগানিস্তান: ৪১.১ ওভারে ১৯৩/৩ (রিয়াজ ৩৫, গুরবাজ ১০৬, রহমাত শাহ ৪৭, হাশমতউল্লাহ ২, নাজিবুল্লাহ ১; সাকিব ১০-০-৪৭-১, মুস্তাফিজ ৬-০-২৪-০, তাসকিন ৪-০-৩৬-০, শরিফুল ৭-০-৪১-০, আফিফ ২-০-৮-০, মিরাজ ৮.১-১-৩৭-২)।
ফল: সাত উইকেটে জয়ী আফগানিস্তান।