নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৭:২৩ : অপরাহ্ণ
শুরুতে কাজটা করে রেখেছিলেন ব্যাটাররা। বাকিটুকু সারলেন বোলাররা। এতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৮৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
জবাবে আফগানিস্তান ৪৫.১ ওভার খেলে ২১৮ রান করে।
দুর্দান্ত এই জয়ে এক ওয়ানডে হাতে রেখেই তিন ম্যাচ সিরিজ জিতলো তামিম ইকবালরা।
বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলীয় ১৬ রানের মাথায় দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই দলীয় ৩৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় তারা।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে একটি দারুণ জুটি পায় সফরকারীরা।
রহমত শাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান মিলেন গড়েন ৮৯ রানের জুটি।
এই জুটিতে মূলত লড়াই জমিয়ে তোলে আফগানিস্তান। বোলিংয়ে এসে রহমতকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ।
৫২ রান করে রহমত ফিরলে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশের।
এরপর থিতু হয়ে যাওয়া আরেক ব্যাটার নাজিবুল্লাহকেও আউট করেন তাসকিন।
তাসকিনের বলে ৫৪ রানে থামেন নাজিবুল্লাহ। এই দুজন বিদায় নিলে আফগানদের সমীকরণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
মাঝে রহমতউল্লাহকে সাকিব আউট করলে বিপদে পড়ে যায় তারা। এই বিপদ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ফল আর নিজেদের পক্ষে নিতে পারেনি আফগানিস্তান।
থেমে যায় ২১৮ রানে।
৪০ বলে ৩২ রান করেন নবি। আর রশিদ খান করেন ২৯ রান।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ও সাকিব আল হাসান ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল।
শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাট চালিয়েছেন তামিম। কিন্তু বেশিদূর লম্বা হয়নি অধিনায়কের ইনিংস।
প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও ফারুকির বলে পরাস্থ হলেন তামিম।
সপ্তম ওভারে তার দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরলেন তামিম।
বাঁচার জন্য রিভিউ নিলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি। ২ চারে ২৪ বলে ১২ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
তামিমকে হারানোর পর জুটি গড়তে থাকেন সাকিব-লিটন। দুজনের জুটিতে বড় কিছুর আশা দেখলেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব।
দলীয় ৮৩ রানে স্পিনার রশিদ খানের বলে এলবির শিকার হন দেশসেরা অলরাউন্ডার। ২ চারে ৩৬ বলে ২০ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন সাকিব।
দলীয় ৮৩ রানে সাকিব ফিরলে দলের হাল ধরেন লিটন ও চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিম।
আগের ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া লিটন-মুশফিক আজ খেলেন নির্ভার হয়ে।
৮ চারে ৬৫ বলে অর্ধশতক করেন লিটন। ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ ফিফটি।
লিটনের কিছুক্ষণ পর হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ৫০ ছুঁয়েছেন ৫৬ বলে।
তার ইনিংসে চারের মার ছিল ৬টি। এটি তার ক্যারিয়ারের ৪১তম অর্ধশতক।
এই জুটিতে বড় সংগ্রহের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পথে ১০৭ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস।
৪১তম ওভারে রশিদ খানকে চমৎকার ইনসাইড আউটে কাভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আদায় করে নেন সেঞ্চুরি। শতক স্পর্শ করতে লিটন খেলেন ১৪টি বাউন্ডারি।
সেঞ্চুরির পর বোলারদের ওপর আরো চড়াও হন লিটন। সঙ্গে মেরে খেলেন মুশফিকুর রহিমও। কিন্তু দুজনে মিলে ইনিংস শেষ করতে পারলেন না।
১৩৬ রানে গিয়ে থামেন লিটন। আর সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফেরা মুশফিক করেন ৮৬ রান। তার ইনিংসটি ৯টি চারে সাজানো।
লিটন-মুশফিক মিলে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ২০২ রানের জুটি।
ততক্ষণে রান পাহাড়ে পিষ্ট হয়ে গেছে আফগানিস্তান। শেষ ৩ ওভারে ১৯ রান যোগ করে টাইগাররা।
৬ বলে ৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। আর আফিফ করেন ১২ বলে ১৩ রান।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০৬ রান।
বল হাতে আফগানিস্তানের ফরিদ ২টি এবং ফারুকি ও রশিদ খান ১টি করে উইকেট নেন।
এতোদিন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ২৯৭।
লিটন-মুশফিকের রেকর্ড গড়া জুটিতে ভর করে টাইগাররা সেই রেকর্ডই ভেঙেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৪ (তামিম ১২, সাকিব ২০, লিটন ১৩৬, মুশফিক ৮৬, মাহমুদউল্লাহ ৬, আফিফ ১৩; মুজিব ১০-০-৪৯-০, রশিদ ১০-০-৫৪-১, ফারুকি ১০-১-৫৯-১, নবী ৪-০-২৬-০, ফরিদ ৮-০-৫৬-২, রহমত ১-০-১০-০)।
আফগানিস্তান: ৪৫.১ ওভারে ২১৮ (রহমত ৫২, রিয়াজ ১, হাশমতউল্লাহ ৫, আজমতউল্লাহ ৯, নাজিবুল্লাহ ৫৪, গুরবাজ ৭, নবী ৩২ , রশিদ ২৯, মুজিব ৮, ফারুকি ০, ফরিদ ৬; তাসকিন ১০-২-৩০-২, মুস্তাফিজ ৮-০-৫৩-১, মিরাজ ১০-০-৫২-১, শরিফুল ৭-০-৪৪-১, সাকিব ৯-০-২৯-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-২-১)।
ফল: ৮৮ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস।