নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৭:১৮ : অপরাহ্ণ
‘তীরে এসে তরী ডোবাই’ বাংলাদেশ ক্রিকেটের চেনা গল্প। এবার ‘ছেড়া পাল ও ভাঙা তরী’ তীরে ভেড়ালেন বাংলাদেশ দলের দুই তরুণ মাঝি আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
আফিফের ৯৩ আর মিরাজের ৮১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প লিখলো টাইগাররা।
সপ্তম উইকেটে এ দুজনের হার না মানা ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটিতে আফগানদের বিপক্ষে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে সবকটি উইকেটের বিনিময়ে ২১৫ রান সংগ্রহ করে সফররত আফগানিস্তান।
জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
এ জয়ের ফলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের আগের সেরা জুটি ছিল ইমরুল কায়েস-সাইফ উদ্দিনের ১৪০ রান।
২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জুটি গড়েছিলেন। আজ তাদের পেরিয়ে গেছেন আফিফ-মিরাজ। এ ছাড়া বিশ্বে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি।
এর উপরে আছে একটি জুটি। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জস বাটলার-আদিল রশিদ ১৭৭ রান করেছিলেন।
আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
প্রথম ওভারে ১২ রান আসলেও তৃতীয় ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে দুই ওপেনারকে হারায় স্বাগতিকরা।
প্রথমে ফজলহক ফারুকির তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন দাস(১)। এক বল পরেই ফারুকি এলবির ফাঁদে ফেলেন তামিম ইকবালকে (৮)।
নিজের পরের ওভারেই ফের ঝলক দেখান ফারুকি। এবার তিনি ৩ রান করা মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করেন এলবির ফাঁদে ফেলে। আর একই ওভারের শেষ বলে অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বিকে শূন্য রানে সরাসরি বোল্ড করেন।
মাত্র ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন দিশেহারা। একাই চার উইকেট নিয়েছেন ফারুকি!
দল যখন খাদের কিনারায়, তখন ক্রিজে আসেন সাকিব। তবে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে সাকিবও ধরলেন তামিম-লিটনদের পথ।
অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে মুজিবের বলে বোল্ডই হয়ে গেলেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের ভয় ছিল রশিদ খানকে নিয়ে, কিন্তু আফগান এই লেগি বোলিংয়ে আসার আগেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান হারিয়েছে বাংলাদেশ।
রশিদ খান উইকেট পেলেন তার প্রথম ওভারেই। মাহমুদউল্লাহকে (৮) স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠিয়েছেন রশিদই।
মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়তে থাকেন আফিফ হোসেন।
২২তম ওভারে গুলবাদিন নাইবকে চার মেরে দলীয় স্কোর একশ পার করেন আফিফ। তাতেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
বিপদের মূহুর্তে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে আফিফ তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। ৬৪ বলে তিনি দেখা পান ফিফটির।
তার সঙ্গী মেহেদি হাসান মিরাজ। দুর্দান্ত জুটি গড়ে দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার পথে অর্ধশতক তুলে নেন মিরাজও।
উইকেট কামড়ে ধরে ৭৯ বলে তুলে নেন দুর্দান্ত এক অর্ধশতক।
শেষ পর্যন্ত দুজনের সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মিরাজ ও আফিফ।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি পেসারের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ১৪ বলে ৭ রানে তামিমের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি।
দলীয় ১১ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা।
এরপর শুরুর ধাক্কা সামাল দেন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। তাদের এই জুটি ভাঙেন শরীফুল ইসলাম। ৩ রানে জীবন পাওয়া ইব্রাহিমকে ১৯ রানে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
আফগানদের দ্বিতীয় জুটি ভাঙে ৪৫ রানে।
আফগান শিবিরে তৃতীয় আঘাত হানেন তাসকিন। ডান-হাতি পেসারের দ্বিতীয় স্পেলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। ৬৯ বলে ৩৪ রান করে আউট হন রহমত।
জমে যাওয়ার আরেক ব্যাটার হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে বোলিংয়ে এসেই ফিরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের অফ স্পিনে কাটা পড়েন আফগান অধিনায়ক। ৪৩ বলে ২৮ করে ফিরে যান শাহিদি।
২৮ ওভারে আফগানদের ৪ উইকেট নিলেও রান দেওয়ায় কিপটে ছিলেন বাংলাদেশি বোলারেরা।
২৮ ওভারে স্কোরবোর্ডে আফগানিস্তান তোলে ১০২ রান।
কিন্তু এরপর কিছুটা ছন্দ হারান বাংলাদেশের বোলারেরা। সে সুযোগ লুফে নিয়ে রানের গতি বাড়ায় আফগানিস্তান।
মোহাম্মদ নবি ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটে আরেকটি ভালো জুটি পায় আফগানিস্তান। এ জুটিতে তারা পায় ৬৩ রান।
এরপর শেষে দিকে জাদরানের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে ২১৫ রান তোলে সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩৫ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ৫৫ রান খরচায় তাসকিন নেন দুটি উইকেট।
সমান দুটি করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ৪৯.১ ওভারে ২১৫/১০ (রহমতউল্লাহ ৭, জাদরান ৯, রহমত শাহ ৩৪, শাহিদি ২৮, নাজিবুল্লাহ ৬৭, নবী ২০, নাইব ১৭, রশিদ ৯, ইয়ামিন ৫, মুজিব ০, ফারুকি ০; মিরাজ ১০-৩-২৮-০, সাকিব ৯-১-৫০-২, তাসকিন ১০-০-৫৫-২, মুস্তাফিজ ৯.১-০-৩৫-৩, শরিফুল ১০-১-৩৮-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-১)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২১৯ ( তামিম ৮, লিটন ১, সাকিব ১০, মুশফিক ৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, ইয়াসির ০, আফিফ ৯৩, মিরাজ ৮১; ফারুকি ১০-১-৫৪-৪, রশিদ ১০-১-৩০-১, মুজিব ১০-০-৩২-১, নবী ১০-১-৩২-০)।
ফল: চার উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।