নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৪:৪১ : অপরাহ্ণ
দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে উদ্বোধন হলো অমর একুশে বইমেলার।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শুরু হয়েছে মাসের মাঝামাঝিতে।
৩৮তম এ বইমেলা চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বইমেলা ১৩ দিনের বদলে ৩০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রকাশকেরা।
তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রকাশকদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় পুরো মাসই (মেলা) চালাতে পারি। যেহেতু আমাদের প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ পর্যন্ত চালাতে পারে। আমি মনে করি যে, বইমেলা এক মাস চালাতে পারি। তবে সেটা আপনারা নিজেরাও ভেবে দেখবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মেলা হচ্ছে আমাদের প্রাণের মেলা। কোনো কারণে এই মেলাটা হতে না পারলে সবারই মন খারাপ হয়।’
দেশের আন্দোলন সংগ্রামে কবি, সাহিত্যিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটুকুই বলবো একটি জাতি সবসময় উন্নতি করতে পারে, যদি তার ভাষা সংস্কৃতি উন্নতি হয়। আর আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
রাত ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
এছাড়া মহান একুশে ফেব্রুয়ারি মেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।
বইমেলা উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায় বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট, মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বইমেলায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে জনসাধারণের জন্য রয়েছে চারটি প্রবেশপথ ও তিনটি বের হওয়ার পথ।
বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বরাবরের মতো বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভেলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার এর জন্য একটি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবার শিশুচত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশু প্রহর’ থাকছে না।
অন্যদিকে, লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মোট ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্যোগ নেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।