শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

১০ বছরেও হয়নি সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত


এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:১২ : পূর্বাহ্ণ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার কথা বলেছিলেন।

আর তখনকার পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার খুনি চিহ্নিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন।

কিন্তু বাস্তবে গত ১০ বছরে এ মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।

একাধিক সংস্থার হাতবদল করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৮৫ বার সময় নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু তদন্তে কেন দীর্ঘসূত্রতা-সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

বর্তমানে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থা র‌্যাবের কোনো কর্মকর্তাও তদন্তের বিলম্বের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দুজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষা করে শনাক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এখন মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রে ফরেনসিক ও ডিএনএ টেস্টের নামে ঝুলে আছে।

ছয় বছর আগে সেখানকার দুটি বেসরকারি ল্যাবে এ টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়।

এমন মামলা হয়তো খুঁজে পাওয়াই কঠিন যে, দীর্ঘ ১০ বছরেও এর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া যায়নি। শুধু সময় পেছানোর মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আমরা অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করেছি এবং প্রায় দেড় শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া ইউএসএ-তে ডিএনএ পরীক্ষা করেছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও কাজ অব্যাহত রয়েছে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখছি না।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ঢাকা মহানগরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে এবং আমাদের প্রসিকিউশনের পক্ষেও সদিচ্ছা আছে যে, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে আসুক।’

অন্যদিকে, মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলমের অভিযোগ-তদন্ত সংস্থার আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, এ কারণে মামলার অগ্রগতি নেই।

নওশের বলেন, ‘অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এ মামলার বিচারের ব্যাপারে। বিচার নিয়ে আসলে আমাদের সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে, এমন একটা ব্যাপার। যাচ্ছেতাইভাবে প্রহসন করা হচ্ছে।’

এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না দেখেই চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মারা গেছেন মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা।

নিহত সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১০ বছর হয়ে গেল। এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। মামলার তারিখ আসে আর যায়। কোনো কাজ হয় না।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি।

পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন:

সিইসি নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা গণসংহতির

আর্জেন্টিনা পেলো নতুন ‘মেসি’

ইত্যাদি খ্যাত গায়ক আকবরের বেহাল দশা

যে গ্রামে মানুষের বয়স ৫০ হলেই হয়ে যান অন্ধ

এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের বাদী হয়ে রাজধানীর শেরে বাংলানগর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আট জনকে আটক করা হয়।

বাকিরা হলেন-রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর রহমান, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।

প্রথমে মামলাটির তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। পরে তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি।

এরপর আদালত র‌্যাবকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই থেকে র‌্যাব মামলাটি তদন্ত করছে।

তদন্তভার পেয়েই ভিসেরা পরীক্ষার জন্য কবর থেকে সাগর-রুনির লাশ উত্তোলন করে র‌্যাব।

ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাদের মৃত্যুর আগে কোনো ধরনের বিষাক্ত বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করা হয়নি। ছুরিকাঘাতে রক্তক্ষরণ ও আঘাতের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর