বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৬ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আইন-আদালত

মেজর সিনহা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

লিয়াকত ও প্রদীপ মৃত্যুদণ্ডের হকদার: বিচারক


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৫৪ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ২৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ের শেষ পৃষ্ঠায় পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ষড়যন্ত্রমূলক পূর্বপরিকল্পিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি মো. লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশ আগাগোড়া নেতৃত্ব দিয়েছে; তাই তারা সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার হকদার।

আজ রোববার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত এ রায় প্রকাশ করা হয়।

রায়ে বিচারক বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী যে অপরাধ করেছে; তাতে তারা মৃত্যুদণ্ডের হকদার।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত প্রধান আসামি মো. লিয়াকত আলীর সাজার বিষয়ে রায়ের শেষ পৃষ্ঠায় বিচারক বলেন, আসামি মো. লিয়াকত আলী মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপর আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র করেছে এবং উপর্যপুরি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে মারাত্মক আহত সিনহা মো. রাশেদ খানকে হাসপাতালে পাঠাতে দেরি করে। পরে এ হত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য এবং অপরাধের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামলার আলামত ধ্বংস করে ফেলে। নিহত সিনহা মো. রাশেদ খান ও ভিকটিম সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে খুনের ও মাদকের দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটন করেছে। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনসহ সকল আসামির অপরাধের বর্ণনা দেওয়া হয়।

একইভাবে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর আসামি প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বিচারক বলেন, প্রদীপ কুমার মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপর আসামিদের সঙ্গে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র করেন। পরিকল্পনামতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অপর আসামিদের সহায়তা করে গুলি করে সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যা করে আহত সিনহা মো. রাশেদ খানের বুকের বাম পাশে লাথি মেরে পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙে ফেলে এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

রায়ে বলা হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পরক্ষণে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মারাত্মক আহত সিনহা মো. রাশেদ খানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালে পাঠাতে দেরি করে। হত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য এবং অপরাধের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মামলার আলামত ধ্বংস করে এবং নিহত সিনহা মো. রাশেদ খান ও ভিকটিম সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে খুনের ও মাদকের দুটি মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটন করেছে।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত তিন আসামি নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মাকে সাজা প্রদানের ব্যাখ্যা করে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, অপরাধের বিষয়ে পূর্ব থেকে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য এবং অপরাধের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামলার আলামত ধ্বংস করে ফেলে। এ ছাড়া নিহত সিনহা মো. রাশেদ খানের গাড়িতে অবৈধ মাদক রেখে নিহত সিনহা মো. রাশেদ খান ও ভিকটিম সাহেদুল ইসলাম সিফাত এর নামে খুনের ও মাদকের দুটি মিথ্যা মামলায় সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আইয়াজ, মো. নূরুল আমিনের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বিচারক রায়ের শেষ পৃষ্ঠায় বলেন, আসামি মোহাম্মদ আইয়াজ মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপর আসামিদের সাথে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র করে। কক্সবাজার টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের মুইন্না পাহাড়ে ডাকাত হিসাবে মাইকিং করে গণপিটুনি দিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও মো. লিয়াকত আলীকে সিনহা মো. রাশেদ খানের গতিবিধি অবগত করে। উক্ত তথ্য প্রদান করে ও অপরাধজনক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অপর আসামিদের সহায়তায় গুলি করে সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।

সর্বোপরি, আলোচ্য মামলার ষড়যন্ত্রমূলক পূর্বপরিকল্পিত চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি মো. লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশ আগাগোড়া নেতৃত্ব প্রদান করায়, তারা সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার হকদার।

এদিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি (ডেথ রেফারেন্স) ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনও করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষে ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গুলিতে নৃশংসভাবে খুন হন মেধাবী সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নানা অপচেষ্টা চালানো হলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম ও তাদের নৃশংসতার কাহিনি।

এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডদের বিচারক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।

খালাসপ্রাপ্ত সাত আসামিরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০)।

মামলাটি তদন্ত করেছেন কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর দুই কর্মকর্তা সহকারি পুলিশ সুপার মো. জামিলুল হক ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের ‌সি‌নিয়র জু‌ডি‌শিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। তাদের মধ্যে ৬৫ জন ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালতে সাক্ষ্য দেন।

কেন ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলেন সিনহা?

সিনহা মো. রাশেদের অবসরপরবর্তী জীবনের কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি বিভিন্ন শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক এবং ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে ‘জাস্ট গো’ (Just Go) নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই চ্যানেলের ডকুমেন্টরি কনটেন্ট তৈরি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি ভিডিওচিত্র ধারণ করতেন। এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য নিরলস কাজ করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সিনহা মো. রাশেদ তার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাত, তাহসিন নুর রুপ্তি, শিপ্রা দেবনাথসহ মোট চারজন ২০২০ সালের ৩ জুলাই ভিডিওচিত্র ধারণ করার কাজে কক্সবাজারে আসেন এবং হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন।

সিনহাকে নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন হলেন ওসি প্রদীপ?

ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলের ধরার জন্যই কাজ করছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে ২০২০ সালের ৭ জুলাই কক্সবাজারের রামু থানাধীন হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টের একটি কটেজে ওঠেন। সেখানে তিনি আশেপাশের চিত্র ধারণসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার তথ্যাদি সংগ্রহ করেন এবং তা ভিডিওচিত্রে ধারণ শুরু করেন।

এরপর সিনহা মো. রাশেদ টেকনাফেও একই ধরনের প্রামাণ্যচিত্র ধারণ শুরু করেন। তখন লোকমুখে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার তথ্য সংগ্রহ করার সময় ওসি প্রদীপের মাদক নির্মূলের নামে টেকনাফ থানার নিরীহ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়নের তথ্য জানতে পারেন। নির্যাতনের শিকার অনেক ভিকটিম পরিবারের সদস্য সিনহা ও তার সহযোগীদের কাছে প্রদীপের অত্যাচার-নিপীড়নের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এসব শুনে সিনহা ও তার সহযোগীরা ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী ও তাদের পেটুয়া বাহিনীর নাম সংগ্রহের চেষ্টা করেন।

ওসির হুমকিকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন সিনহা

টেকনাফে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির এক পর্যায়ে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সিনহা মো. রাশেদ ও তার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতদের দেখা হয়ে যায়। তখন তাদের সঙ্গে ক্যামেরাসহ ভিডিও ধারণের নানা সরঞ্জাম ছিল। তারা ওসি প্রদীপের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। তখন প্রদীপ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। ওসি প্রদীপ এও বলেন, তিনি মেজর-টেজর এর ধার ধারেন না। তিনি বহু সাংবাদিককে পিটিয়েছেন, জেলে পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে ভয়ভীতি দেখান ও হুমকি দেন এবং কক্সবাজার জেলা ছেড়ে যেতে বলেন। ওসি প্রদীপ তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন, ইন্টারভিউ, ভিডিওচিত্র বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে তাঁর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এবং কর্তৃপক্ষকে জানালে মেজর সাহেব ও তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন। এরপর ওসি প্রদীপ তার থানা এলাকায় নিয়োজিত সব সোর্সের সাথে কথা বলেন এবং গোপন বৈঠক করেন। ওসি প্রদীপের হুমকির বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সিনহা ও তাঁর সঙ্গীরা নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করেই প্রামাণ্যচিত্রের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।

হুমকির পরও সিনহা ও তার দল কক্সবাজার না ছাড়ায় ওসি প্রদীপের সন্দেহ হয়, সিনহা মো. রাশেদ সেনাবাহিনীর সাবেক অফিসার পরিচয় দিয়ে টেকনাফে তার থানা এলাকায় তার নানা কুকর্মের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিম পরিবারের লোকজনের সাথে গোপনে যোগাযোগ করছে। এসব অপকর্মের বিষয়গুলো প্রচার হলে তার চাকরির বিরাট ক্ষতি হবে অনুধাবণ করে বিষয়টি তিনি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে জানান। অতঃপর তিনি থানা এলাকায় নিয়োজিত সব সোর্সের সঙ্গে কথা বলেন এবং গোপন বৈঠক করেন।

এরই ধারাবিহকতায় ২০২০ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাদের সোর্স মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও আসামি মো. নিজাম উদ্দিনের মাধ্যমে সিনহা ও তাদের সঙ্গীদের সম্পর্কে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। সিনহা ও তার সঙ্গীদের দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ ও থানা পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে খবর দেওয়ার জন্য সোর্সদের বলেন। শুধু তাই নয়, প্রদীপ কুমার দাশের নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফ থানার হাম জালাল (৫০), মো. আলী আকবর (৪৪), ছেনোয়ারা বেগম (২৪), সালেহ আহমদ (৫০), বেবি বেগমদের (৩০) বাড়িতে সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠানো হয় এবং সিনহা ও তার ভিডিও টিমের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। অভিযোগপত্রের ১৩ পাতার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে মো. লিয়াকত আলী পুলিশের সোর্সদের সিনহা ও তাঁর ভিডিওদলকে তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।

টেকনাফে প্রদীপের অপরাধের রামরাজত্ব?

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, আসামি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের মহেশখালী থানা থেকে ২০ অক্টোবর ২০১৮ সালে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে টেকনাফ মডেল থানায় যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি মাদক নির্মূলের আড়ালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পেশিশক্তি প্রদর্শন ও অন্যায় এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও স্থানীয় মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নিরীহ পরিবারকে টার্গেট করেন। এরপর তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, অনেক লোকজনকে ক্রসফায়ার দিয়ে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিশাল অংকের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আদায়ের নির্মম নেশায় লিপ্ত হন।

ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় যোগদানের পর তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে শতাধিক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় বহু লোক মারা যায়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধ প্রক্রিয়া (মডাস অপারেন্ডি) ছিল কোন ঘটনায় মাদক উদ্ধার হলে অথবা টার্গেট কোন ব্যক্তিকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হলে (ফিটিং মামলা) প্রথমত আসামি বা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় কিছু লোকজনসহ তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য দেন-দরবার করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিমের পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা ক্রসফায়ার না দেওয়ার শর্তে আদায় করা হতো। প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ আশানুরূপ বা চাহিদানুরূপ হলে ভিকটিমকে ক্রসফায়ারে না দিয়ে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে উক্ত ব্যক্তির বা আসামির আত্মীয় স্বজনদের মামলার আসামি করা হতো। এই ক্ষেত্রে মহিলা, বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী কেউ তার আক্রোশ থেকে রেহাই পেত না। এমনকি মহিলাদের ওপর যৌন নিপীড়নও করা হতো বলে তদন্তে জানা যায় এবং এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে বলে জানা যায়। এরপর শুরু হতো তার অন্যরকম অবৈধ অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ তার দায়ের করা মামলার কথিত এজাহারে বর্ণিত আসামিদের ক্রসফায়ারের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাড়িঘর হতে উচ্ছেদ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ আসামির সৃজিত সম্পত্তি হতে বেদখল করে এবং ভয় দেখিয়ে মামলা প্রতি লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করাই ছিল তার নেশা ও পেশা। এ কাজ করার জন্য তিনি (প্রদীপ) তার সমমনা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নিজস্ব পেটোয়া ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন।

প্রদীপের এই ধরনের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। যারা ন্যূনতম প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছে তারা এবং তাদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়-স্বজন তার অত্যাচার, নিপীড়নসহ মামলা-হামলার শিকার হতো। তিনি টেকনাফ থানায় যোগদান করেই স্থানীয় কিছু দালাল শ্রেণির লোকজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং মাদক নির্মূলের অজুহাতে এবং নিজেকে সরকারের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক দেখানোর আড়ালে জনগণ তথা সরকারি দল-মতের তোয়াক্কা না করে পুরো থানা এলাকায় এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে সমাজ ও জনপদে ত্রাস সৃষ্টি করে অপরাধের অভয়ারণ্য ও অপরাধ কর্মের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল। এ ধরনের অপরাধ কর্মের প্রচার ও প্রসার রোধে আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার দলবল স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে মুখ বন্ধ করে রাখতেন। এতেও কাজ না হলে ভয়ভীতি হুমকি প্রদর্শনসহ মামলায় জড়িয়ে কণ্ঠরোধ করা হতো। তার কুকর্মের বিষয়ে কেউ যাতে সংবাদ সংগ্রহ করতে এবং প্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে প্রদীপ কুমার দাশ ছিলেন খুব সোচ্চার ও সতর্ক। এ ধরনের লোকজনের তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি তার থানায় এলাকাভিত্তিক সোর্স নিয়োগ করে রাখতেন।

যেভাবে খুন করা হয় সিনহাকে

২০২০ সালের ৩১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিনহা মো. রাশেদ খান তার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে নিয়ে প্রতিদিনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভিডিও ধারণ করার জন্য টেকনাফের মারিশবুনিয়ার মুইন্ন্যা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে প্রাইভেটকারযোগে রওনা দেন। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে নতুন মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে গাড়িটি পার্ক করে তারা পাহাড়ের দিকে রওনা হন। তার পরনে ছিল সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো কমব্যাট প্যান্ট ও কমব্যাট গেঞ্জি এবং সাথে ছিল ভিডিওধারণের ক্যামেরা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

পাহাড়ে ওঠার সময় মারিশবুনিয়ার মাথাভাঙ্গা জামে মসজিদের ইমামের সঙ্গে সিনহা মো. রাশেদের সালাম বিনিময় হয়। পথে একটি ছোট ছেলের কাছ থেকে তারা পাহাড়ে ওঠার পথও জেনে নেন। এরপর তারা ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করার জন্য মুইন্ন্যা পাহাড়ে ওঠেন। অতপর পাহাড় ও সমুদ্রের চিত্র ধারণ করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসে। ইতোমধ্যে পুলিশের সোর্স মো. নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াজ লোক মারফত জানতে পারেন মুইন্ন্যা পাহাড়ে ভিডিও ধারণের জন্য দুজন লোক উঠেছে। তারা আরও জানতে পারেন, তাদের একজন সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত এবং তাদের সাথে ক্যামেরা আছে। এতে তারা নিশ্চিত হন, এরাই সেই ভিডিও পার্টি, যাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত আলী তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন।

এরপর রাত ৮টার দিকে নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াজ মেজর সিনহা মো. রাশেদকে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত আলীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী ডাকাত সাব্যস্ত করে গণপিটুনি দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সেজন্য দক্ষিণ মারিশবুনিয়া জামে মসজিদের মাইকে তারা ঘোষণা করেন, পাহাড়ে ডাকাত দেখা যাচ্ছে। তখন কিছু লোক জড়ো হয়। কিন্তু পাহাড়ে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় লোকজনের কাছে তারা ডাকাতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এরপরও দমে যাননি নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াজ। তারা মাথাভাঙ্গা মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলামকে দিয়ে মাইকে অনুরূপ ঘোষণা দেওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাফেজ জহিরুল ইসলাম উপস্থিত লোকজনদের বলেন, উক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ সিনহা মো. রাশেদ খান ডাকাত নয়, আর্মির লোক। পাহাড়ে ওঠার পূর্বে তার সঙ্গে মেজর সাহেবের দেখা হয়েছে এবং সালাম বিনিময় হয়েছে। একথা বলায় লোকজন চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর সিনহা মো. রাশেদ ও সিফাত পাহাড় থেকে আইয়াজ, নুরুল আমিন ও নিজাম উদ্দিনের সামনে দিয়ে নেমে আসেন। সে সময় নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াজ তাদের হাতে থাকা টর্চ লাইটের আলো ফেলে নিশ্চিত হয়, এরাই সেই ভিডিও দল।

অভিযোগপত্রের আরও বলা হয়, এই তিন আসামি নুরুল আমিন, আইয়াজ ও নিজাম উদ্দিন সিনহা মো. রাশেদকে অনুসরণ করে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত আসেন এবং তারা কোন দিকে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত হন। সিনহা মো. রাশেদ তার নিজস্ব প্রাইভেটকার চালিয়ে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছেন এ তথ্যটি আসামি নুরুল আমিন রাত ৮টা ৪৭ মিনিটে পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মোবাইল ফোনে জানান। এ ছাড়াও রাত ৮টা ৪৭ মিনিট থেকে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে নুরুল আমিন ও লিয়াকত আলীর মধ্যে ১৪-১৫ বার মোবাইলে কথোপকথন হয়। নুরুল আমিনের ফোন পেয়ে লিয়াকত আলী তড়িঘড়ি করে সাথে কোন ফোর্স না নিয়ে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ একটি মোটরসাইকেলযোগে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে হাজির হয়ে সশস্ত্র অবস্থান নেন। তারা সিনহা মো. রাশেদের গাড়িটি সেখানে আসার অপেক্ষায় থাকেন।

অভিযোগপত্রে ১৩ পাতায় তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, মেজর (অব.) সিনহার গাড়িটি রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করেন। এরপর রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে গাড়িটি শামলাপুর চেকপোস্টে পৌঁছালে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য রাজীব গাড়িটি থামার সংকেত দিলে তারা গাড়িটি থামান। তখন রাজীর পরিচয় জানতে চাইলে গাড়ির বাঁ পাশের আসনে বসা সিফাত গাড়ির জানালা খুলে দেন। এ সময় ড্রাইভিং সিটে বসা সিনহা মো. রাশেদ নিজের পরিচয় দেন। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর রাজীর এবং অন্য দুইজন সদস্য এসআই শাহজাহান আলী ও আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ইমন স্যালুট দিয়ে গাড়িটিকে চলে যাওয়ার সংকেত দেন।

মেজর সিনহা তখন গাড়িটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। হঠাৎ মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নাম শুনেই মো. লিয়াকত আলী চিৎকার করে গাড়িটির সামনে চলে আসেন এবং আবার তাদের পরিচয় জানতে চান। পুনরায় মেজর (অব.) সিনহা নিজের পরিচয় দেন। তখন লিয়াকত আলী উত্তেজিত হয়ে লাফ দিয়ে সামনে গিয়ে আবার ব্যারিকেড তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেন। এ কাজে এসআই নন্দ দুলালও সহযোগিতা করেন। এরপর লিয়াকত আলী পিস্তল তাক করে অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে সিনহা মো. রাশেদকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং গাড়ির সব যাত্রীকে দুই হাত উপরে তুলে নেমে আসতে বলেন। হঠাৎ তার চিৎকারে রাস্তার দুই পাশের চলাচল করতে থাকা লোকজনও হকচকিত হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য পথচারীরা দাঁড়িয়ে যান। এই চেকপোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার লাইট দিয়ে আলোকিত করা ছিল এবং এতে আশপাশের মসজিদ, বাজার ও রাস্তায় চলাচলকারী লোকজন পরিষ্কারভাবে সব কিছু দেখতে পেত।

অভিযোগপত্রের ১৪ পাতার প্রথম অনুচ্ছেদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ওই সময় লিয়াকত আলী উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। তখন গাড়ির ২নং আসনে বসা সাহেদুল ইসলাম সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন। ড্রাইভিং সিটে বসা মেজর সিনহাও দুই হাত উঁচু করে নেমে ইংরেজিতে কাম ডাউন, কামডাউন বলেন এবং লিয়াকত আলীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

লিয়াকত আলী মেজর সিনহার পরিচয় জেনে তার কোন কথা না শুনে এবং তাকে কোন প্রকার সময় না দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে প্রথমে দুই রাউন্ড গুলি করেন এবং কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আরও দুই রাউন্ড গুলি করেন। এতে মেজর সিনহা রাস্তায় পড়ে যান। গুলি করার পর লিয়াকত আলী মেজর সিনহা ও সিফাতকে হাতকড়া পড়ানোর নির্দেশ দেন। তখন এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত আহত সিনহা মো রাশেদকে হাতকড়া পড়ায়। কিন্তু এসআই মো. শাহাজাহান আলীর কাছে হাতকড়া না থাকায় লিয়াকত তাকে গালমন্দ করে এবং রশি এনে সিফাতকে বাঁধতে বলে। তখন কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে ইমন পাশের শামলাপুর বাজারের দোকান থেকে রশি এনে এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল রাজিবের সহযোগিতায় সিফাতকে রশি দিয়ে বাঁধেন।

ঘটনার পর লিয়াকত আলী মোবাইল ফোনে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ড কথা বলেন এবং তিনি ওসি প্রদীপকে ঘটনাটি জানান। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে লিয়াকত আলী ঘটনাটি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানান। সিনহা মো. রাশেদ তখনও জীবিত ও সজাগ ছিলেন এবং ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে মেজর সিনহা একটু পানি খাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। এটা শুনে এবং তাকে তখনও জীবিত অবস্থায় দেখে লিয়াকত আলী আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি সিনহাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোকে গুলি করেছি কি পানি খাওয়ানোর জন্য? এরপর লিয়াকত আহত সিনহার কাছে যান এবং বুকের বা পাশে জোরে কয়েকটি লাথি মারেন এবং পা দিয়ে বুক চেপে ধরেন। ইতোমধ্যে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে ফোন করে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে কিছু পুলিশ পাঠাতে বলেন।

নন্দ দুলাল রক্ষিতের ফোন পেয়ে তদন্ত কেন্দ্র থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এএসআই লিটন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, ছাফানুল করিম ও কামাল হোসেন আজাদ সিএনজিযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর লিয়াকত আলী এপিবিএন সদস্য এসআই লিটন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, কামাল হোসেন আজাদ ও ছাফানুল করিমকে সিনহা মো. রাশেদের গাড়িটি তল্লাশি করতে বলেন। তারা গাড়ির ভেতরের সামনের দুই সিটের মাঝখান থেকে একটি অস্ত্র, ড্যাসবোর্ডে কিছু কাগজপত্র, ক্যামেরা, সিডিবক্স ও ভিডিও করার যন্ত্রপাতি পান। তখন গাড়িতে কোন মাদক পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি রাস্তার দুই পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী, পথচারী, মসজিদ, বাজার ও জেলেঘাটের লোকজন চেকপোস্টের পরিষ্কার আলোয় প্রত্যক্ষ করেন। সেদিন চাঁদ রাত হওয়ায় সেখানে লোক সমাগমও বেশি ছিল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, লিয়াকত আলীর সফলতার ফোন পেয়ে ওসি প্রদীপ একটি সাদা মাইক্রোবাস এবং একটি পিকআপভ্যানে তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুতগতিতে রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর প্রদীপ ও লিয়াকত আলী একান্তে কিছু সময় আলাপ করেন। তারপর প্রদীপ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা মেজর সিনহার কাছে যান। তখন প্রদীপ দম্ভোক্তি করে বলেন, অনেক টার্গেট নেওয়ার পর কুত্তার বাচ্চারে শেষ করতে পারছি। তারপর প্রদীপ প্রথমে মেজর সিনহাকে পা দিয়ে নড়াছাড়া করে দেখেন। সিনহা তখনও জীবিত ছিলেন এবং পানি চাচ্ছিলেন। প্রদীপ তখন তার পায়ের জুতা দিয়ে মেজর সিনহার গলা চেপে ধরেন এবং এক পর্যায়ে সিনহার শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখনও প্রদীপ, লিয়াকত এবং সঙ্গীয় ফোর্সের কেউই সিনহার পড়ে থাকা দেহটিকে হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ না নিয়ে ঘটনাস্থলে ফেলে রাখেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওসি প্রদীপ তার সঙ্গীয় ফোর্সের মাধ্যমে মেজর সিনহার গাড়িটি পুনরায় তল্লাশি করে মাদক খুঁজে বের করতে বলেন। তার সঙ্গে আসা টেকনাফ থানার সাগর দেব ও রুবেল শর্মা নিজেদের বহনকারী মাইক্রোবাসের দিকে যান এবং এর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে চিৎকার করে বলেন, মেজর সিনহার গাড়ির ভেতর মাদক পাওয়া গেছে।

এরপর ওসি প্রদীপের নির্দেশে তার সঙ্গীয় ফোর্স মেজর সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের হাত বেঁধে চেকপোস্টের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাঁর মুখের উপর পানি ঢেলে অবর্ণনীয় কায়দায় নির্যাতন করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এই সময়ের সব ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সিনহা মো. রাশেদকে হাসপাতালে নেওয়ার কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রায় সোয়া ঘণ্টা বিলম্বিত করা হয়েছে। সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত আলী অস্বাভাবিক দেরিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। পরে এএসআই লিটন এবং কনস্টেবল কামাল হোসেন আজাদ ও সাফানুল করিম মেজর সিনহাকে একটি পিকআপে তুলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে যত চেষ্টা

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার অন্যতম সাক্ষী সার্জেন্ট মো. আইউব আলী আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট (এএসইউ) রামু ক্যান্টনমেন্ট শামলাপুর আর্মি আরপি চেকপোস্টে থাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তিনি ঘটনাস্থল শামলাপুর চেকপোস্টে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ অন্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। সার্জেন্ট আইউব আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে চিনতে পেরে এবং তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে সিনহার ছবি তুলেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সার্জেন্ট আইউব আলীর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন। খবর পেয়ে রামু ক্যান্টনমেন্টের লেফটেন্যান্ট মুনতাছির আরেফিন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে উপস্থিত হন। তার সঙ্গে সার্জেন্ট আইউব আলী তদন্ত কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকেন। সেখানে তাদের সঙ্গে ওসি প্রদীপ উচ্চস্বরে কথা বলেন ও দুর্ব্যবহার করেন।

ঘটনার পর রামু সেনানিবাস থেকে সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উপস্থিত হন। সেখানে তারা মেজর (অব.) সিনহার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ওসি প্রদীপসহ স্থানীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এরপরও ওসি প্রদীপ সিনহার পরিচয় সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে ঢাকায় অবস্থানরত তাঁর মাকে ফোন করেন এবং তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হন। তবে সিনহার হত্যার ঘটনাটি তাঁর মায়ের কাছে গোপন করেন ওসি প্রদীপ। শুধু তাই নয়, হত্যার ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি বানোয়াট মামলা দায়ের করেন। এরপর প্রদীপের নির্দেশে সিনহার সহযোগী সিফাতকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়। তাদের অপর সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানাধীন নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের ভিডিও তৈরির কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, ল্যাপটপসহ একাধিক জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। এসব যন্ত্রপাতি থানায় নিয়ে নিয়ে তাদের শুট করা সব ভিডিও আলামত নষ্ট করা হয়।

চরিত্র হননের চেষ্টা

অভিযোপত্রে উল্লেখ করা হয়, আলামত নষ্ট করার পাশাপাশি সিনহা ও তাঁর সহযোগীদের চরিত্র হরণ করার উদ্দেশ্যে এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গভীর রাতে নীলিমা কটেজে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আড়াল করার অপচেষ্টা চালানো হয়। এ ছাড়া সিনহা ও তাঁর সহযোগীদের চরিত্র হনন করার জন্য অপপ্রচার চালানো হয়। পরের দিন শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে সাজানো মাদক উদ্ধার মামলায় টেকনাফ মডেল থানার মাধ্যমে আদালতে চালান করা হয়।

সিনহার বোনের মামলা, আসামিদের আত্মসমর্পণ

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট খুন হওয়া সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে তিন নম্বর আসামি করা হয়। বাকি ছয় আসামি হলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) টুটুল, সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মো. মোস্তফা। আদালত মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন কক্সবাজারের র‍্যাব-১৫ কে। ৭ আগস্ট মামলার সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তারা হলেন লিয়াকত আলী, প্রদীপ কুমার দাশ, নন্দ দুলাল রক্ষিত, মো. লিটন মিয়া, ছাফানুর করিম, মো. কামাল হোসাইন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা আত্মসমর্পণ করেননি।

তদন্তে আরও আটজন অভিযুক্ত

র‍্যাব তদন্তে নেমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও আটজনের সংশ্লিষ্টতা পায়। তারা হলেন ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান আলী (৪৭), বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০), স্থানীয় বাসিন্দা টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)। তাদের মধ্যে সাগর দেব বাদে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর চার মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত নয় আসামির মধ্য থেকে এসআই টুটুল এবং কনস্টেবল মো. মোস্তফাকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযুক্ত বাকি পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব ২০২১ সালের ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত ১৫ আসামি গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আইনের আওতায় আসেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

কক্সবাজারের এসপির উদাসীনতা

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মেজর (অব.) সিনহা হত্যার পূর্বেও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের অপকর্মের খবরাখবর প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও যথাসময়ে তা প্রতিরোধে কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদুর রহমান উদাসীন ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন স্বনামধন্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হওয়ার সংবাদে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও ঘটনার অব্যবহিত পর ঘটনাস্থলে তৎকালীন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা তার অপেশাদারিত্ব ও অবহেলামূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, মেজর (অব.) সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সুপারের এসব আচরণ প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয় এবং জনমনে তার পক্ষপাতিত্বমূলক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করে বলে মনে হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের শনাক্ত করার বিষয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদুর রহমানের তদারকি এবং দায়িত্ব পালনে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন ছিল।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, নিহত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ অবগত হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে হাসপাতালে পাঠানোসহ ত্বরিৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ সুপারের সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা বা মনিটরিং পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া পুলিশ সুপারের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর তদারকিতে ঘাটতি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। পুলিশ সুপারের এমন অবহেলামূলক ও দায়িত্বহীন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা যেতে পারে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর