প্রতিনিধি, কক্সবাজার প্রকাশের সময় :১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২:৪৪ : অপরাহ্ণ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের আদালতে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম বলেন, রায়ের পর সোমবার সন্ধ্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে পুলিশ ভ্যান কারাগারে পৌঁছায়। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে অন্য আসামিদের কাছ থেকে আলাদা করা হয়। কারাগারের একটি কক্ষকে কনডেম সেল ঘোষণা করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছে।
জেল সুপার বলেন, জেল কোড অনুযায়ী তাদের প্রতিদিন খাবার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কনডেম সেল হিসেবে যে কক্ষে রাখা হয়েছে সেখানে চুপচাপ বসে আছেন প্রদীপ ও লিয়াকত। তারা কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। তাদের স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং তারা খাবার খাচ্ছেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে সিনহা হত্যা মামলায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
আরও পড়ুন: রায় শুনে ছটফট করছিলেন ওসি প্রদীপ
এ ছাড়া ছয় আসামি সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গতকাল রায়ের পর সন্ধ্যায় আসামিদের কারাগারে আনা হয়।
এদিকে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এপিবিএনের এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দেন আদালত।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে এপিবিএন চেকপোস্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে।
অবসরে যাওয়ার পর ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন রাশেদ।
তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।
বিষয়টি উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামী করা হয় সিনহার সঙ্গি সিফাতকে।
আরও পড়ুন: ২০ সেকেন্ডের মধ্যে লিয়াকত দৌড়ে এসে সিনহাকে গুলি করে: বিচারক
কিন্তু সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের ৬ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলা করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
তদন্ত শেষে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চার্জশিট প্রদান করেন।
এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন।
তারপর ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।
৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
সবশেষে গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি মামলায় দু’পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করলে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।