শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:২৯ : পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি বগুড়া শহরের দেয়ালে দেয়ালে ‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ শিরোনামে লিফলেট সাঁটানো হয়েছে।

এটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বগুড়ার জহুরুলনগরের মো. আলমগীর কবির নামে এক যুবক লিফলেটে এই আবেদন জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজে ২০১৮ সালে ঢাকার সাভার এসেছিলেন তিনি।

বন্ধুর মেসে বিনা পয়সায় থাকার পাশাপাশি বন্ধুর খাবারই ভাগাভাগি করে খেতেন।

তারপর সকালের নাশতার বিনিময়ে রাস্তার পাশের এক ফুচকার দোকানে কাজ নেন।

তবে ঢাকার জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় এক পর্যায়ে বগুড়ায় ফিরে যান তিনি।

বগুড়ায় টিউশনি শুরু করে দিন ভালোই চলছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি কারণে একটি বাদে সবকটি টিউশনি হারানোর পর বাধ্য হয়ে ‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ শিরোনামে লিফলেট সাঁটান তিনি।

তিনি এখন বগুড়া শহরের জহুরুলগর একটি বাড়িতে বিনামূল্যে থাকেন।

তবে খাবারের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়ার বিজ্ঞাপনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন আলমগীর।

তিনি জানান, প্রচারপত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি পোস্ট করেননি। অপরিচিত একজন করেছেন।

তারপর থেকেই অনেকের ফোনকল পাচ্ছেন আলমগীর।

আরও পড়ুন: রাস্তায় ঘুমানো বস্তির সেই মেয়েটি আজ মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা!

তবে কেউ কেউ এই প্রচারপত্রকে সরকারবিরোধী বলেও মন্তব্য করছেন বলে জানান আলমগীর।

এমন লিফলেট ছাপানোর বিষয়ে আলমগীর কবির একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এখন একটি টিউশনি থেকে মাসে দেড় হাজার টাকা পান। এই টাকা দিয়ে তার একবেলা খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। এছাড়া চাকরি আবেদন ও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রায়শই তার ঢাকায় যাওয়া-আসাতেও অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে নিজের জন্য দিনে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে কষ্ট হচ্ছিলো তার। তাই বাসার আশেপাশে ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর জন্য লিফলেট ছাপান।

তিনি বলেন, ‘দুবেলার খাবারও আমি এমনি চাইনি। পড়ানোর বিনিময়ে চেয়েছি। এটা খুবই স্বাভাবিক চাওয়া। কিন্তু মানুষ একে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে এখন লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি এই বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের উন্নয়নবিরোধী কোনো কথা বলিনি। এমন কিছু বোঝাতেও চাইনি। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই।’

১৯৯০ সালের ২০ মে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শরাইল গ্রামে আলমগীরের জন্ম। ২০০৭ সালে নিজ এলাকার শরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের কবির এসএসসি পাস করেন। ২০০৯ সালে স্থানীয় এক কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪ দশমিক ৫০ নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

তার বাবা একজন পল্লী চিকিৎসক। নাম মো. কফিল উদ্দিন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আলমগীর সবচেয়ে ছোট। তার বড় ভাই রুহুল আমিন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। আর বড় তিন বোন রয়েছে।

চাকরির ব্যাপারে আলমগীর জানান, তার বাবা প্রথমে পরামর্শ দিয়েছিলেন সরকারি চাকরির খোঁজ করতে। এরপর বাবা একদিন বলেন, ‘এখন যা পাও, তাই করো।’

তিনি বলেন, ‘বাবার কথাতেই ঢাকায় এসেছিলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগুলোতে পাস করেছিলাম। কিন্তু যাওয়ার পরে তারা বলে, আপনার তো অভিজ্ঞতা নেই। পরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করলাম। চাকরি হয় একদম ছোট একটি পদে। বেতনও কম। মাত্র ৮ হাজার টাকা। পড়ার সময় পেতাম না। চাকরির জন্য পরীক্ষার দিনও ছুটি পেতাম না। এ জন্যই চাকরি ছেড়ে দেই।’

আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। কারো অনুদানের প্রয়োজন পড়েনি। মাস্টার্স পাশ করেছি। এখন চাকরি নেই। চাকরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পরীক্ষাও দিচ্ছি। তবে এরমধ্যে সরকারি কয়েকটি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় টিকেছি। এখন ভাইভার জন্য ডাক পড়েছে। একটা সময় অবশ্যই চাকরি পাব।’

আরও পড়ুন: যে গ্রামের সব নারীই সুন্দরী কিন্তু বিয়ে করতে চায় না কেউ!

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর