রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:৪৩ : অপরাহ্ণ
‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি’ কিংবা ‘চোরের মার বড় গলা’-প্রবাদ বাক্যের যথার্থতা প্রমাণ করেছে বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ কেএসআরএম।
পাহাড় কাটার অপরাধে জরিমানা দিয়ে পুনরায় কাটবে না মুচলেকা দিলেও কথা রাখেনি।
নিয়মিত পাহাড় কাটছে, কিন্তু সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যেতে দেবেন না।
ফলে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযানে গেলেও ফটক থেকে ফিরতে হয়েছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
অবশ্য পরে কেএসআরএম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভুল স্বীকার করেছেন।
বাস্তবতা হলো, প্রতিষ্ঠানটি বারবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের কেএসআরএম কারখানায় পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল।
কারখানার ভেতরে পাহাড় কেটে সমতল বানানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তদন্তে গিয়েছিলেন তারা।
পরিবেশ আইনে কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশের অধিকার থাকলেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
কেএসআরএমের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের দাবি, কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।
তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর এক প্রকার অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়েছে পরিবেশ কর্মকর্তাদের।
তাই এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি কাজে বাধার অভিযোগের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এর আগে গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছুটির দিনে পাহাড় কাটছিল কেএসআরএম।
খবর পেয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম পরিদর্শনে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এর পর আরও কয়েকবার সেখানে অভিযানের দল পাঠানো হয়।
সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে যান।
ফেরদৌস আনোয়ার একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কারখানার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন ব্যক্তি আমাদের প্রবেশে বাধা দেন। পরে অনুমতি নিয়ে আসবেন বলে আমাদের অপেক্ষায় রেখে অফিসে যান; কিন্তু আর আসেননি। পরে আমরা অ্যাডমিন অফিসার নাজিউর রহমানের মোবাইলে কল দিলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসতে বলেন।
ওই দিনের ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র এবং নাজিউর রহমানের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে।
এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফেরদৌস আনোয়ার কেএসআরএমের অ্যাডমিন অফিসার নাজিউর রহমানকে বলেন-‘আমরা আপনার গেটে দাঁড়িয়ে আছি।’
জবাবে নাজিউর রহমান বলেন-‘বুঝছি স্যার, একটু হায়ার ম্যানেজমেন্ট থেকে পারমিশন নিয়ে আসেন।’
এরপর ফেরদৌস আনোয়ার বলেন-‘পারমিশন কি আমাদের নিতে হবে, আইন কি বলছে পারমিশন নিতে?’
নাজিউর রহমান জবাব দেন-‘আমাদের তো পারমিশন দেয়নি’।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে কেএসআরএমের কারখানার এক ব্যক্তিকে বলতে দেখা গেছে, ‘আপনারা শুধু শুধু শুকনা জায়গায় আসছেন।’
তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘আমরা এখানে ঢুকতে পারি কিনা?’
জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন-‘পারতেছেন না স্যার।’
ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আমরা যেতে পারি কিনা?’
তখন কেএসআরএমের কারখানার ওই ব্যক্তি বলেন-‘পারেন স্যার কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকতে হবে।’
এরপর ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘আইন আমাদের অধিকার দিয়েছে।’
তখন ওই ব্যক্তি বলেন-‘আপনারা একটা কাগজ দেন অর্ডারের।’
এ ঘটনার পর কর্মকর্তারা ফিরে যাওয়ার সময় কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম ফোন করে ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন এবং পরিদর্শনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার পর তারা সব সময় ভুল স্বীকার করেন, কিন্তু পরে একই কাজ করেন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরে ওই এলাকায় নানা কৌশলে পাহাড় কাটছে কেএসআরএম।
বাড়বকুণ্ডে পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় কাটায় কেএসআরএম গ্রুপকে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
জরিমানার পর কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে পাহাড় কাটবে না বলে অঙ্গীকার করেছিল।
কিন্তু অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে পাহাড় কেটে এলাকার জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাটির ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করে চলেছে শিল্পগ্রুপটি।
জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর পরিদর্শনের জন্য চিঠি দিয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে যাবেন।