প্রতিনিধি, সিলেট প্রকাশের সময় :২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:০৪ : পূর্বাহ্ণ
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে আট দিন পর অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ১০টায় হাসপাতালে থাকা অনশনরতরা ক্যাম্পাসে ফেরেন।
অনশন ভাঙলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ভিসি বিরোধী আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার ভোর ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে পৌঁছান অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মীনী ইয়াসমীন হক।
তারা সরাসরি চলে যান অনশনস্থলে। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।
এসময় আন্দোলনে সহায়তার জন্য ৫ সাবেক শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তারের কথা শুনে জাফর ইকবাল আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
এসময় তিনি পকেট থেকে টাকা বের করে বলেন, ‘আমি আসলে এসেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। আমি খুব ইমোশনাল, আমার চোখে পানি চলে আসে। ওরা (সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী) টাকা-পয়সা দেওয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তোমাদেরকে সাহায্য করতে যদি এরেস্ট হতে হয় তাহলে আমিও হব। আমি তোমাদেরকে এই ১০ হাজার টাকা দিলাম। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে এরেস্ট করে কিনা।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক অধ্যাপক বলেন, ‘আমি ধরে নিয়েছিলাম, অনশনের এখানে মেডিকেল টিম আছে। তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, ডাক্তাররা ছিলেন কিন্তু তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি এসব ঘটনা বলবো। এখানের অনশনকারীদের অবস্থাই যখন এতো খারাপ, তাহলে অসুস্থ ২০ জনের কি অবস্থা! আমি শঙ্কিত। এটা চরম অমানবিকতা। ’
গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি পুলিশের আইজিকে বলেছি, ছাত্রদের বিশ্বাস করুন। ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তাদের মারবেন না। সবার হাতে স্মার্টফোন থাকে একটা ছবি দেখান যে, ছাত্ররা গুলি করেছে। এসবের কোনো প্রমাণ নেই।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছো। ৩৪ জন ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমরা সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে নাড়া দিয়েছ। তোমাদের আমি অভিনন্দন জানাই। এমন আন্দোলনে বাইরের মানুষ নিজেদের স্বার্থে নিয়ে নেয়। তোমরা সেটা হতে দাওনি। আমি বহিরাগত। এরপরও তোমরা যদি আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেবো।’
প্রসঙ্গত, আন্দোলনে অর্থ জোগানের অভিযোগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে।
গ্রেপ্তার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন-হাবিবুর রহমান খান (২৬), রেজা নুর মুইন (৩১), এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), একেএম মারুফ হোসেন (২৭) এবং ফয়সাল আহমেদ (২৭)।