রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন কোহিনূর বেগম।
পিত্তথলির অপারেশনের আগের দিন ধরা পড়ে করোনা।
পাঠানো হয় ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে।
এই হাসপাতালে সাত দিন আগে রোগী ভর্তি ছিল ১৮ জন।
এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন একশোর বেশি রোগী।
প্রতিদিন গড়ে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৪০ জন।
রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ।
ঢাকা মেডিকেলে ১৫ দিনে রোগী বেড়েছে ৫ গুন। একই অবস্থা মুগদা, কুর্মিটোলাতেও।
দেশে করোনায় সংক্রণের হার এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ৷ এর আগে কখনও এত দ্রুত ছড়ায়নি করোনা।
২০ দিন আগের তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায়, শনিবার শতকরা ২৮ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়; আর গতকাল রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ ভাগ।
গত কয়েক দিনের চিত্র দেখলে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
১১ জানুয়ারি শনাক্ত হয় দুই হাজার ৪৫৮ জন, মারা গেছেন দুজন। ১২ জানুয়ারি শনাক্ত দুই হাজার ৯১৬, মৃত্যু চার।
১৩ জানুয়ারি শনাক্ত তিন হাজার ৩৫৯, মৃত্যু ১২ ৷ ১৪ জানুয়ারি শনাক্ত চার হাজার ৩৭৮, মৃত্যু ছয় ৷
১৫ জানুয়ারি শনাক্ত তিন হাজার ৪৪৭, মৃত্যু সাত ৷ ১৬ জানুয়ারি শনাক্ত পাঁচ হাজার ২২২, মৃত্যু আট।
১৭ জানুয়ারি শনাক্ত ছয় হাজার ৬৭৬, মৃত্যু ১০৷ ১৮ জানুয়ারি শনাক্ত আট হাজার ৪০৭, মৃত্যু ১০৷
১৯ জানুয়ারি শনাক্ত ৯ হাজার ৫০০, মৃত্যু ১২৷ ২০ জানুয়ারি শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ হন, মারা গেছেন চার জন ৷
এই বিবেচনায় ১০ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ ৷
আর যদি ১ জানুয়ারির বিবেচনা করা হয় তাহলে সংক্রমণ বড়েছে ৩০ গুণ ৷
১ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন ৷ মারা গেছেন চার জন ৷
২০২০ ও ২১ সালের জুলাই-আগস্টে বাড়ে সংক্রমণ। গত বছরের জুলাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ৮ জুলাই, ৩২ ভাগ। শনাক্তের হার ২৮ ভাগ বাড়তে সময় লাগে ১২৯ দিন।
কিন্তু চলতি ২৮ ভাগ শনাক্ত বেড়েছে মাত্র ২০ দিনে। অর্থাৎ দেশে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে এখন।
দেশে গত ৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৫২ হাজার রোগী। এক মাসে আগের একই সময়ে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৪৯৬ জন।
ওমিক্রনের কারণেই সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে দাবি চিকিৎসকদের।
তারা বলছেন, এবার করোনার সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, এখন ঢাকা শহরে ৭০-৭৫ ভাগই ওমিক্রনের সংক্রমণ ৷ আর ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি ৷ ফলে দ্রুত ছাড়াচ্ছে ৷ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকার বাইরে এবং গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷
তিনি বলেন, ‘আগামী দুই-তিন সপ্তাহ এটা বাড়তে থাকবে ৷ এই হারে বাড়লে দিনে সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে ৷ আর আগে দেখা যেতো পিক-এ গিয়ে কমে যায় কিন্তু এবার সহসা পিক থেকে নামবে না ৷ এবার ছাড়ানোর হার অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি ৷ হাসপাতালেও আগের পিকের সমান রোগীই যাবে ৷ যাদের টিকা দেয়া আছে তারা আক্রান্ত হলেও বেশি জটিলতা হবে না ৷ কিন্তু যারা এখনও টিকা দেন নি এবং বয়ষ্ক ও নানা শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য বিপদ ৷ তাই টিকা নিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷ মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি ৷’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে নেয়া নয়, সংক্রমণ ঠেকানোই হলো মোকাবেলার উপায় ৷ নয়তো কোনওভাবেই হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেয়া যাবে না ৷’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা দেয়ার গতি আরো বাড়াতে হবে৷ মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে ৷ স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে হবে ৷ আর ঘরে বাইরে সবখানেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে হবে ৷ কারণ বদ্ধ জায়গায় করোনা বেশি ছড়ায় ৷ সরকার নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকতে পারে না ৷ এটা কার্যকর করাও তার দায়িত্ব।’