রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ জানুয়ারি, ২০২২ ২:০৬ : অপরাহ্ণ
ভিনগ্রহের এক জীব বোকাসোকা এক বালকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তার পর থেকেই মেধায় পিছিয়ে থাকা কিশোরটি হয়ে উঠল দারুণ মেধাবী।
তার শারীরিক দক্ষতাও বেড়ে গেলে অবিশ্বাস্যভাবে। বিশাল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান ছেলেটি করে দিত অবলীলায়।
এলিয়েনের ছোঁয়ায় এক কিশোরের ‘বিস্ময় বালক’ হয়ে ওঠার এই গল্পটি বলিউডের এক বিজ্ঞান কল্পকাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্রের।
ঠিক এই চলচ্চিত্রের মতো অতি অবিশ্বাস্য পর্যায়ের না হলেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের এক শিশু তার মেধায় বিস্ময় জাগিয়েছে।
সাত বছর বয়সী শিশুটির নাম সামিউন আলিম সাদ।
দুই বছর বয়সে শোনা মাত্রই যে কোনো মোবাইল নম্বর বলে দিতে পারতো সাদ।
দিনে দিনে আরও মেধাবী হয়ে ওঠে ঝিনাইদহের এই বিস্ময় বালক।
২০২০ সালে প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল তাকে।
করোনার কারণে গত দুই বছরে শারীরিকভাবে পুরো এক মাসও ক্লাসে যাওয়া হয়নি তার।
অথচ ঘরে বসে লেখাপড়া করেই সাদ শিখে ফেলেছে বিস্তর বিষয়।
বাংলাভাষী শিশু হিসেবে বেশ ভালো করেই রপ্ত করেছে ইংরেজি ভাষা।
মানচিত্রে বিভিন্ন দেশ, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগরের অবস্থান নিমেষে দেখিয়ে দিতে পারে।
ইংরেজিতেও পৃথিবীর গঠন, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরিসহ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বিষয়ের বর্ণনা করতে পারে দক্ষতার সঙ্গে।
চোখের পলকে এঁকে দিতে পারে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানচিত্র।
বলতে পারে প্রতিটি দেশের চারপাশের সব দেশের নাম।
সাদ রপ্ত করেছে মহাকাশের চেনা গ্রহ, উপগ্রহের নাম ও অবস্থান।
বীজগণিত আর জ্যামিতিরও অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে সে।
সাদ কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী এ এইচ এম আলিমের ছোট ছেলে। মা আয়েশা আক্তার চার্লি কলেজ শিক্ষক।
আরও পড়ুন: ৫৪ বছরে এসএসসি পাস করলেন আব্দুল হান্নান
সাদের বাবা এ এইচ এম আলিম জানান, বড় বোন প্রমি গৃহশিক্ষকের কাছে ইংরেজি পড়তো। তখন সাদের বয়স তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। তখনই সে ইংরেজি বই পড়তে চাইতো। তখন তাকে নিজের ফোনে ইংরেজি বর্ণমালা শেখার অ্যাপস ডাউনলোড করে দেন। তখন থেকে সাদ মা-বাবার সহায়তা নিয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু করে। বাধা না দিলেও নেহাত শিশু বলে তারা সে কী দেখছে তার ওপর সব সময় নজর রাখতেন। কয়েক মাসের মধ্যে সাদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইংরেজি পড়তে শিখে যায়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সে বড় বোনের গণিত বই থেকে যেকোনো বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান করে দিয়ে বাড়ির সবাইকে অবাক করে দিতে থাকে সাদ। ২০২০ সালে স্কুলে ভর্তির পর মাত্র দেড় বছরে একে একে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব গণিত বইয়ের সব বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান করে দেখিয়েছে সে।
সাদের মা আয়েশা আক্তার চার্লি জানান, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর স্কুল থেকে পাওয়া বই সাদ তিন দিনেই পড়া শেষ করে ফেলে। তিন দিন পর সে বলে, ‘এই বই আমার পড়া শেষ।’ তারা ছেলের কথা শুনে প্রথমে গুরুত্ব দেননি। পরে যাচাই করতে গিয়ে তার মুখস্থ করার ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যান। সাদ এরপর দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দিতে আবদার করে। কৌতূহলী হয়ে মা-বাবা তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দেন। এবারও দুই-তিন দিনের মধ্যে সব বই পড়া শেষ করে ফেলে সে।
এভাবে চলতে থাকে। মাত্র দেড় বছরেই প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব বই পড়ে শেষ করে ফেলে সাদ।
তবে তার বেশি আগ্রহ ভূগোল, গণিত ও জ্যামিতি, মহাকাশ, পদার্থবিদ্যা এবং মানবদেহ নিয়ে।
শিশুটির মেধা আর জ্ঞানের প্রখরতায় বিস্মিত তার চারপাশের মানুষ।
স্থানীয় মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিশু সাদ অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে ক্লাস নাইনের বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান খুব সহজেই করতে পারে। সব কিছু ইংরেজিতে বর্ণনা করতে পারে সে।’
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অলোক কুমার সাহা বলেন, ‘এত মেধাবী শিশু খুবই বিরল। এ ধরনের ট্যালেন্টেড শিশুদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করার এক বছরের মধ্যেই অধ্যাপক হওয়া সম্ভব। তবে সাদ প্রকৃতই সুপার ট্যালেন্ট কি না তা নিশ্চিত হতে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।’
সাদ পরিবারের বড়দের সহায়তায় একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে মহাকাশ, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট আপলোড করেছে।
তার স্বপ্ন, বড় হয়ে সে একজন গণিতবিদ অথবা মহাকাশ বিজ্ঞানী হবে।
আরও পড়ুন: ১ হাজার ৪৮৩ টাকায় ব্যবসা শুরু, এখন ৬ হাজার কোটি টাকার শিল্প গ্রুপ