রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ জানুয়ারি, ২০২২ ৯:০৪ : অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্র আয়োজন করে মিস ইউনিভার্স। মিস ওয়ার্ল্ড আয়োজন করে ব্রিটেন।
প্রথমটি শুরু হয়েছে ১৯৫২ সালে আর দ্বিতীয়টি ১৯৫১ সালে।
১৯৬০ সাল থেকে জাপান আয়োজন করতে শুরু করে মিস ইন্টারন্যাশনাল আর ফিলিপাইন ২০০১ সালে শুরু করে মিস আর্থ।
প্রায়ই বিশ্লেষকরা খেতাব জেতার হার ধরে নানা রাজনৈতিক হিসাব মেলানোর চেষ্টা করেন।
সে আলোচনায় একটি দেশের নাম ঘুরেফিরে আসে-ভারত। তারপর জ্যামাইকা।
ভারত ছয় বার মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে, চারবার জিতেছে জ্যামাইকা। এ দুটি দেশই ব্রিটিশ কলোনি ছিল।
অন্যদিকে মিস ইউনিভার্স আটবার জিতেছে আয়োজক আমেরিকা। তারপর ভেনিজুয়েলার পরেই আসে পুয়ের্তো রিকোর নাম।
এর মধ্যে ভেনিজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ এবং পুয়ের্তো রিকো যুক্তরাষ্ট্রের আনইনকরপোরেটেড টেরিটরি (দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কিছু অনুশাসন বলবৎ আছে)।
যাহোক ওই চারটি প্রতিযোগিতার মোটমাট হিসাবে ২৩টি পুরস্কার জিতেছে ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন জিতেছে ১৫টি, যুক্তরাষ্ট্র ১৫টি, পুয়ের্তো রিকো ১০টি আর ভারত ৯টি। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য জিতেছে ৭টি করে।
এর মধ্যে ফিলিপিনো নারীদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা নির্মল, সরলমতি, ভোলাভালা এবং নম্র স্বভাবের।
আবার ভারতীয় নারীদের বিষয়ে বলা হচ্ছে, তারা শুধু বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকেও সুন্দর।
তাদের অনেকে নিরামিষভোজী তাই তাদের ত্বক সুন্দর হয়, চেহারা হয় ঝলমলে।
তাদের স্বর ও স্বভাব হয় কোমল। মনও নরম। তাদের হাসি সুন্দর, তারা তাদের পরিবারকে ভালোবাসে।
অনেকে আবার তাদের চোখের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন (ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চোখ যেমন), কেউ কেউ বলছেন সুন্দর ঠোঁটের কথা। ঘন কালো চুলেরও গুরুত্ব আছে অনেকের কাছে।
অনেকে আরেকটু গভীরভাবে ব্যাপারটি দেখার চেষ্টা করেছেন, ভারতীয়দের মধ্যে ককেশীয় এবং দ্রাবিড়ীয় উভয় নরকুলের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সেহেতু তাদের গাত্রবর্ণ যেমন উজ্জ্বল হয়, আবার মুখ হয় গোলাকার। এমনটা পৃথিবীতে খুব বেশি হয় না।
২০০০ সালে ভারত যেমন মিস ওয়ার্ল্ড এবং মিস ইউনিভার্স দুটিই জিতেছিল।
ভারতের জিনাত আমান ও তারা আনে ফনসেকা মিস এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল জিতেছেন যথাক্রমে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে।
সবমিলিয়ে ভারত পুরস্কারটি জিতেছে ৩ বার। এছাড়া মিস এশিয়া প্যাসিফিক ওয়ার্ল্ডও জিতেছে ৩ বার। মিস সুপ্রান্যাশনাল ২ বার, মিস ট্যুরিজম ২ বার। আর নিকোলে এসটেলা ফারিয়া মিস আর্থ জিতেছেন ২০১০ সালে।
উল্লেখ্য ভারতের সমান ছয়বার মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে কেবল ভেনিজুয়েলা। যেখানে আমেরিকা মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে তিনবার।
ওদিকে ভারত বেস্ট থ্রিতে পৌঁছেছে অনেকবারই।
আরো বড় কথা, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে বলা হয়, এযাবৎকালের সবচেয়ে সফল মিস ওয়ার্ল্ড।
আরও পড়ুন: ৪২ কোটি টাকার মুকুট মাথায়, আরও যেসব সুবিধা পাচ্ছেন বিশ্বসুন্দরী হারনাজ
মিস ইউনিভার্সে ভারত বেশিই সফল। এ বছর, এই একুশ সালেও মিস ইউনিভার্স জিতলো মিস ইন্ডিয়া।
ভারতের বিশ্বসুন্দরীদের তৈরি করে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বিশ্বদরবারে হাজিরের কাজটি করে মূলত ফেমিনা।
১৯৬৪ সালে শুরুর পর থেকে ফেমিনাই যোগাযোগ গড়ে দিচ্ছে বিশ্ব পরিসরে।
সত্তর ছুঁই ছুঁই ফেমিনার তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা প্রতিযোগীরা এর মধ্যেই ঝুলিতে পুরেছে চারবার মিস ইউনিভার্সের তকমা আর মিস ওয়ার্ল্ডের তকমা ছয়বার।
ভারত থেকে যাওয়া প্রতিযোগীদের মিস ইন্ডিয়া হওয়ার মধ্য দিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার শুরু।
আর মিস ইন্ডিয়া মানেই ফেমিনার কোনো প্রতিযোগী। ফেমিনার বাইরে থেকেও যে মিস ইন্ডিয়া হননি কেউ এমন নয়। হয়েছেন অনেকেই।
তবে তাদের সুন্দরী প্রতিযোগীতায় আনা প্রতিষ্ঠানের কমই ফেমিনার মতো প্রভাব রাখে।
ফেমিনা পর্ব
ভারতের নামকরা টাইমস গ্রুপের একটি প্রকাশনা ফেমিনা। ১৯৫৯ সালে প্রথম বাজারে আসে নারীদের জন্য এ সাময়িকী।
এটি হিন্দি, বাংলা আর তামিল ভাষায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার বাইরে এ ম্যাগাজিন আরো আয়োজন করে বিউটি অ্যাওয়ার্ডস, ফেমিনা স্টাইলিস্তা, ফেমিনা শোকেস ইত্যাদি।
সাময়িকীটির ফেসবুকে ২.৯ মিলিয়ন ফলোয়ার, ইনস্টাগ্রামে আছে সাড়ে পাঁচ লাখ, টুইটারেও তেমন।
ভারতীয় বিশ্বসুন্দরীদের বুদ্ধিমত্তা
১৯৯৪ সালে মিস ইউনিভার্স হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নারীর গুরুত্ব কি?
উত্তরে বলেছিলেন, নারী হওয়া আশীর্বাদের। নারী মানুষ গড়ে না শুধু, যত্ন নেয়, বড় করে।
১৯৯২ সালে মিস ইউনিভার্স (দ্বিতীয় রানার আপ) হয়েছিলেন মধুশ্রী সাপ্রে। শেষ পর্বের সকল প্রতিযোগীকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশের প্রধান করা হলে প্রথমেই কি করবেন?
মধু উত্তরে বলেছিলেন, আমি বড় বড় খেলার মাঠ তৈরি করব কারণ আমাদের দেশে শিশুদের খেলার মাঠ বেশি নেই।
১৯৯৪ সালে মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া রাই। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। একজন মিস ওয়ার্ল্ডের কী গুণ থাকা আবশ্যক মনে করেন।
তিনি উত্তরে বলেছিলেন, সমবেদনা বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা সুবিধাবঞ্চিত।
যুক্তামুখী মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে।
বিচারকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, আমার আদর্শ হলেন অড্রে হেপবার্ন। তার সমব্যথী মন আছে। তিনি ভেতর থেকেই সুন্দর। আমি থাই ফুড পছন্দ করি আর ফ্রান্সে আবাস গড়তে চাই।
লারা দত্ত ২০০০ সালে মিস ইউনিভার্স হয়েছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অনেকে বলছে এ প্রতিযোগিতা নারীর জন্য অবমাননাকর, আপনি কী বলেন?
লারা বলেন, যারা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য আমি এটাকে দারুণ প্লাটফর্ম মনে করি। নারীর স্বর উঁচু করার ক্ষেত্র এটা। প্রিয়াংকা চোপড়া মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছেন ২০০০ সালেই। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জিতলে তুমি কী কী করবে? তিনি বলেছিলেন, এ সম্মান ও শক্তি ব্যবহার করব মানুষের চিন্তা ও কর্ম প্রভাবিত করতে। মাদার তেরেসাকে আমি হৃদয় থেকে সম্মান করি। তিনি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সারাজীবন ব্যয় করেছেন। আমিও তেমন করতে চাই।
সূত্র: দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড