শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

বঙ্গোপসাগরে যেসব মূল্যবান সম্পদের সন্ধান পেলো বাংলাদেশ


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ জানুয়ারি, ২০২২ ৮:৩১ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু মূল্যবান উদ্ভিদজাত এবং প্রাণীজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রায় দুই বছর গবেষণার পর বাংলাদেশ এসব উদ্ভিদজাত এবং প্রাণীজ সম্পদের সন্ধান পায় বলে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসব গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল যৌথভাবে প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও ম্যারিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান খুরশিদ আলম।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য উপাত্তের বিষয়ে তারা বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ২২০ প্রজাতির সি-উইড, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাসসহ বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘গবেষণায় বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় ম্যারিন জেনেটিক রিসোর্সের অবস্থান চিহ্নিত করা এবং বিবিধ প্রজাতি চিহ্নিত করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রতিনিধিসহ নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক গবেষক ২০২০ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ২২০ প্রজাতির সিওয়েড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস ইত্যাদি চিহ্নিত করা হয়।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহু সংখ্যক প্রজাতির সিওয়েডের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বাংলাদেশে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু সিওয়েডের পাঁচটি শিল্পভিত্তিক প্রয়োগ চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির সিওয়েডে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যা ফিস ফিডের প্রোটিনের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং ফিস ফিডের জন্য আমদানিকৃত ফিস ওয়েলের বিকল্প হতে পারে, যার বাজার অত্যন্ত ব্যাপক।’

তিনি জানান, এ সকল প্রজাতির উপর প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি টেস্ট নেদারল্যান্ডসে সম্পন্ন করা হয়। কোভিড-১৯ জনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গবেষণা কার্যক্রমে সাময়িক বিরতির পর ২০২১ সালে তা পুনরায় শুরু হয়। উক্ত কার্যক্রমে বিশেষ করে বাংলাদেশে সিওয়েড এর সম্ভাবনা ও বাণিজ্যিকীকরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় গ্যাস-হাইড্রেট বা মিথেন গ্যাসের একটি জমাট স্তরের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর অবস্থান, প্রকৃতি ও মজুদের ব্যাপারেও প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকায় ০.১১ থেকে ০.৬৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট জমার অনুমান পাওয়া গেছে যা ১৭-১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের সমান।

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট মিথেন গ্যাসের সন্ধান

সরকার আশা করছে, এ বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট এর উপস্থিতি আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে গ্যাস-হাইড্রেট উত্তোলন সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক উন্নত দেশ এখনও উত্তোলন শুরু করতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ তার মূল ভূখণ্ডের ৮১% পরিমাণ রাষ্ট্রীয় জলসীমা অর্জন করে অর্থাৎ সমুদ্রে মোট ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার জলরাশিতে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর