প্রতিনিধি, খুলনা প্রকাশের সময় :৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১:৩০ : অপরাহ্ণ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ দুপুরে কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা করা হয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে আজ বিকেল ৪টার মধ্যে আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ হল ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুক্রবার সকালে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সকাল সোয়া ১০টায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর সাক্ষাতের পর ড. সেলিমের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই সাক্ষাতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং মানসিক নির্যাতন চালান।
অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি লালন শাহ হলের ডিসেম্বরের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান নিজের লোককে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিমকে জেরা করা শুরু করে।
পরবর্তী সময় তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ড. সেলিম হোসেনের কক্ষে অবস্থান করে। পরে তিনি ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাসায় যান।
সেখানে দুপুর ২টার দিকে বাসার টয়লেটে ড. সেলিম অচেতন হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ সময় শিক্ষক ড. সেলিমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
অপর দাবিগুলো হলো-ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং শিক্ষকের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে।
এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জন, সৎ ও মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করাসহ মাউসির ৮ নির্দেশনা