নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৪ নভেম্বর, ২০২১ ৮:০৫ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রলীগের একাংশ।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা।
গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার কলেজের একাডেমিক সভায় দুই পক্ষের ৩০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার।
বহিস্কৃত ৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জনই নিজেদের পক্ষের বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ অংশটি।
তাদের প্রতিপক্ষ অংশটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের এই অংশের নেতা ও নবগঠিত ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (ইচিপ) সভাপতি কে এম তানভীর।
কে এম তানভীর বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিল বৈধ নয়। তারা বহিষ্কারের নামে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। একাডেমিক কাউন্সিল ২৩ নিরীহ শিক্ষার্থীকে কোনো রকম সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছে। যারা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে জড়িন নন। এমনকি তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৯ অক্টোবর প্রধান ছাত্রাবাসে সংঘটিত ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পরদিন মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলাকারীদেরও শাস্তি দেওয়া হয়নি। মাহাদির ওপর হামলায় অংশ নেন ১৬ জন। তাদের ভিডিও ফুটেজ আছে। এই ঘটনায় থানায় করা মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ ও এজাহারে নাম থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের অপর অংশের মাত্র আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের তোষণ করছেন-এ অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের একাডেমিক কাউন্সিলে রেখেছেন অধ্যক্ষ। ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অধ্যক্ষ পক্ষান্তরে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ২৩ জনের বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা। তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে একাডেমিক কাউন্সিল নেবে।’
গত ২৯ অক্টোবর রাতে ও ৩০ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়।
৩০ অক্টোবর সকালে ক্যাম্পাসের সামনে সংঘর্ষে আহত হন মাহাদি জে আকিব। তিনি নওফেলের অনুসারী।
আগের রাতে সংঘর্ষে আহত হন দুই শিক্ষার্থী। তারা নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
সংঘর্ষের জেরে ৩০ অক্টোবর বিকেলে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই দিন সন্ধ্যাই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সাত কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। এরপর সময় আরও ১০ দিন বাড়িয়ে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় একটি ও চকবাজার থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়। পাঁচলাইশ থানার মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।