নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৮ নভেম্বর, ২০২১ ৪:০৫ : অপরাহ্ণ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
আগামী শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি এমন একটি পর্যায়ে রয়েছেন, যেখানে সুচিকিৎসা না হলে এমন অবস্থায় চলে যাবেন যে আর কোনো চিকিৎসা দিয়েই লাভ হবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই দেশের সব চিকিৎসাই দেখা হয়ে গেছে। বেগম জিয়ার চিকিৎসা সমাধানযোগ্য, কিন্তু তার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বারবার বিদেশে যাবার আবেদন করা হলেও অনুমতি দেয়া হয়নি। সদিচ্ছা থাকলে সরকার চাইলেই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে।’
মির্জা ফখরুল জানান, ঢাকা মহানগরে অনশনের জন্য জায়গা না পাওয়া গেলে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের সামনেই অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ।
এর আগে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রাণপন চেষ্টা করছেন তাকে সুস্থ করে তোলার। সুস্থ করে ঘরে পাঠিয়েছিলেন, আবার তিনি বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। একটা অসুখ তার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাইরে চিকিৎসা করতে পাঠানোটা জরুরি।’
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডাক্তাররাই বলছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠালে তিনি সুস্থ হবেন। তারা আশা করছেন সেটা। দেশের একটা উন্নত হাসপাতাল, তারপরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসার সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা এখানে নেই। বিদেশে পাঠাতে হবে। আজকে অন্যান্য দলগুলোও বলছেন এই কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রী সেটিকে গ্রহণ করছেন না।’
গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
খালেদার অবস্থা ভালো নয় বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়েছে। মানবিক স্বার্থে হলেও দলীয় প্রধানকে বিদেশ নিয়ে যেতে সরকারের অনুমতি চেয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তবে এ বিষয়ে সরকার থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েকবারই বলেছেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রীর মতে, আইন অনুযায়ী বিদেশ যেতে চাইলে খালেদাকে ফের জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার সুযোগ না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর প্রথমে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগার ও পরে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর আরও তিন দফায় তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
আরও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ আইনের বইয়ে নেই, সংসদে আইনমন্ত্রী
শুক্রবার চন্দ্রগ্রহণ, বাংলাদেশে কোথায় কখন দেখা যাবে
আওয়ামী লীগ হেরেছে আওয়ামী লীগের কাছে: তারানা হালিম