নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৩ নভেম্বর, ২০২১ ৬:০৮ : অপরাহ্ণ
ছাত্রলীগের সহিংসতার জেরে গত ১৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)। ক্যাম্পাস কবে খুলবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডা.সাহেনা আকতার। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির আট শতাধিক শিক্ষার্থী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল এই মেডিকেল কলেজ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চালুর দেড় মাসের মাথায় আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষোভে ফুঁসছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের অনেকে কলেজ অধ্যক্ষের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছেন।
গত ৩০ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চমেকে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘাত বাধে।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের তিনজন আহত হন। এর মধ্যে মাহাদি জে আকিব নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হন। তাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। এতে তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সেদিন সংঘর্ষের ঘটনার পর চমেক ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একই সাথে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি ও চকবাজার থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের নেতা-কর্মীরা।
তিনটি মামলায় চমেকের ৪৮ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচলাইশ থানার মামলায় আ জ ম নাছিরের অনুসারী দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রতিপক্ষের ‘হামলার’ প্রতিবাদে গত ৩১ অক্টোবর চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
দুপক্ষের সংঘাতের পর চমেক ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। কলেজ ও হোস্টেল বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাসে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে দুপক্ষের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা রয়েছে।
এর আগে গত দেড় বছর ধরে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাছির ও নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে।
গত ৩ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল ছাত্রলীগ।
কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজ খোলার পর ঠিকমত ক্লাসও শুরু হয়নি, এর মধ্যে আবারও ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সংঘাতের খেসারত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন দেবে?
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজ অধ্যক্ষ ক্যাম্পাসে কাগজেপত্রে রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও বাস্তবে তা বন্ধ করতে পারেননি। গণ্ডগোল হলেই তিনি কলেজ, হোস্টেল বন্ধ করে দেন-এটাতো কোনো সমাধান হতে পারে না। এটা অধ্যক্ষের ব্যর্থতা।
ছাত্রলীগের একাংশও কলেজ অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষের ভূমিকা একপেশে। তিনি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অপর পক্ষকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। যে কোনো ঘটনায় তিনি তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা কে এম তানভীর রাজনীতি সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গত ৩১ অক্টোবর ক্যাম্পাসে আকিবের ওপর হামলা চালানোর পরও নির্বিকার ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ। তিনি সেদিন আমাদের বলেন, ‘এটা তেমন কিছু না। তোমরা ওদের মারছো, ওরাও তোমাদের মারছে।’-এটা একজন অধ্যক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ হতে পারে না। তিনি ওই পক্ষকে সব সময় প্রশ্রয় দেন এবং তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন।’
এ বিষয়ে চমেকের অধ্যক্ষ ডা.সাহেনা আকতার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এককভাবে কোনো ভূমিকা রাখি না। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাঘাত হচ্ছে তা ঠিক। কিন্তু এখন কলেজ খোলার পরিবেশ নেই।’
জানা গেছে, ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রথমে ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল। কিন্তু পরে আরও ১০ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
চমেকের অধ্যক্ষ ডা.সাহেনা আকতার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কলেজ খোলা হবে না। তদন্ত কমিটিকে আরও ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ঘটনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সাথে কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো মতিউর রহমান খান বলেন, ‘কলেজ ও হোস্টেল বন্ধ থাকায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সেজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ১০ দিন সময় চাওয়া হয়। আশা করছি এবার আমরা সময়মতো প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থিত কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ইসলাম শিমুল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বহিরাগতরা এসে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। হয়রানি করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সমাধান না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাস খোলার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে আগে থেকে আমাদের একক আধিপত্য ছিল, এখনো আছে এবং থাকবে। বহিরাগত ১০ জন লোক ভাড়া করে এনে মেডিকেলের বাইরে মানববন্ধন করলে আধিপত্য বিস্তার করা যায় না।’
আরও পড়ুন: দেখে নিন শাহরুখের ম্যানেজার পূজা কে, কী করতে হয় তাকে
আরও পড়ুন: স্কুলে ভর্তির অনলাইন আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, লটারি হবে কেন্দ্রীয়ভাবে