শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি: যাত্রীদের ক্ষোভ, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৮ নভেম্বর, ২০২১ ১১:০৬ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়লেও বাসভাড়া ২৭ শতাংশ আর লঞ্চভাড়া ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।

অনেকেই বলছেন, সরকার কার্যত বাস মালিকদের সুবিধার বিষয়টিই সভার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। এভাবে বাস ও লঞ্চভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তবে বাস মালিকরা ভাড়া ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন।

বাস মালিক সমিতি টানা তিনদিন ও লঞ্চ মালিক সমিতি দুইদিন ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ধর্মঘট তুলে নেয় বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাসমালিকদের সভায় বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে দূরপাল্লায় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১.৮০ টাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসে ২.১৫ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের। মিনিবাসের ক্ষেত্রে এ ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১.৬০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২.০৫ টাকা। সবশেষ দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে ১.৩৯ টাকা এবং মহানগরের ক্ষেত্রে ১.৭০ টাকা ভাড়া ছিল।

এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং মহানগরীতে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে।

এ ছাড়া বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, সিএনজিচালিত বাসের ক্ষেত্রে এ ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। এ ভাড়া শুধু ডিজেলচালিত বাসের জন্য।

অপরদিকে লঞ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৩০ পয়সা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

এই হিসাবে লঞ্চভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের সাথে লঞ্চ মালিকদের এক বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত হয়।

যাত্রীদের ক্ষোভ, ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন
পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেওয়ার পর রোববার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে বাস চলাচল শুরু হয়। রাতেই ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগরীতে আজ সোমবার সকাল থেকে নতুন ভাড়ায় বাস চলাচলে দেখা গেছে অসামঞ্জস্যতা।

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে যত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, বাসগুলোতে নানা অজুহাতে তার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া শুধু ডিজেলচালিত বাসগুলোতে নতুন ভাড়া সংযোজন করা হলেও, সিএনজিচালিত বাসেও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এর মধ্যে কিছু বাসে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের বাগ্‌বিতণ্ডাও দেখা গেছে।

যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এটি অযৌক্তিক। লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ালে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হতো। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে।

যাত্রী আবুল কালাম বলেন, ‘সদরঘাট থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড আগে বাস ভাড়া ছিল ৩০ টাকা, তবে আজ গুলিস্তান থেকে আমাকে ৪০ টাকা ভাড়ায় বসুন্ধরায় যেতে হলো। অথচ ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া হওয়ার কথা ২২ টাকা।’

এদিকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর রাত থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। রাজধানী সদরঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে রাতেই বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো।

সকালে এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। লঞ্চের নতুন ভাড়াকেও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন যাত্রীরা।

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আবু নাসের, নারায়ণগঞ্জ থেকে উৎসব পরিবহনে গুলিস্তানে যাচ্ছেন তিনি।

ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানে যেতে আগে ৩৫ টাকা ভাড়া লাগতো; এখন নতুন ভাড়ায় ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন তো আগের মতোই আছে, নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোত্থেকে।’

বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বাস ও লঞ্চযাত্রীদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে কৌশলে ভাড়া বাড়িয়ে নিলেন মালিকরা। অযৌক্তিক পদ্ধতিতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’

গত বুধবার সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এরপর গত শুক্রবার ভোর থেকে সারা দেশে পণ্য ও যাত্রীবাহী সড়ক পরিবহনে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেন মালিক-শ্রমিকেরা। এর পর শনিবার বিকেল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেন লঞ্চ মালিকরাও।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর