রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ নভেম্বর, ২০২১ ১০:৪৪ : পূর্বাহ্ণ
পরিবহন খাতের গত দুদিনের অচলাবস্থা নিরসনে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সরকারের একটি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে একটা আলোচনাও এই বৈঠক থেকেই শুরু হবে বলে ইঙ্গিত আছে।
এরই মধ্যে বাস-ট্রাক মালিকেরা ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা এই বৈঠক পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট অব্যহত রাখবেন। কিন্তু তারপর তারা কী করবেন সে ব্যাপারে কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
লঞ্চ মালিকেরাও তাকিয়ে আছেন এই বৈঠকের দিকে।
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দেয়া আল্টিমেটাম শেষ হবার সাথে সাথেই সদরঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিতে শুরু করেন মালিকেরা। সন্ধ্যা নাগাদ সদরঘাট পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়।
বাস, ট্রাক কিংবা লঞ্চ মালিকেরা কেউই এই অচলাবস্থা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে করেননি। শনিবার দুপুরের পর কার্যত বাংলাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলমান পরিবহন ধর্মঘট নতুন মাত্রা পায়।
এর আগে শুক্রবার থেকে বাংলাদেশের সব ধরণের বেসরকারি উদ্যোগের সড়ক পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনো চলমান আছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আল্টিমেটামের জবাব দেয়নি সরকার
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, তারা শনিবার দুপুর পর্যন্ত সরকারকে যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তা নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো জবাব তারা পাননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাসোসিয়েশন থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে মালিকরা সব জায়গায় লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক জানিয়েছন লঞ্চ মালিকদের দাবিগুলো নিয়ে রবিবার তারা আলোচনা করবেন।
ওই বৈঠক হওয়ার আগ পর্যন্ত লঞ্চ ও স্টিমার পূর্বের ভাড়ায় চলবে বলে আজ দুপুরেই নিশ্চিত করেছিলেন সাদেক।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিতে শুরু করেন মালিকরা।
এর আগে বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
এরপর বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে ধর্মঘট আহ্বান করে।
এরকম পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তেলের দাম বাড়ার কারণে লঞ্চের ভাড়াও শতভাগ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে এবং দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা সম্ভব হলে ‘ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে’ ভাড়া সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন খাত নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী, অযৌক্তিক ও হঠকারী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেন।
কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ২৩% বাড়ায় মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্য পণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক ব্যয় আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে লঞ্চ-স্টিমারের মালিকরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো একেবারে সম্ভব না হয়, তাহলে যেন পরিবহন মালিকরা ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করেন, সেদিকে নজর রাখা উচিত।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো সম্ভব না হয়, তাহলে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া যেন সর্বোচ্চ ১৫ পয়সার বেশি না বাড়ানো হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।
গত বুধবার সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা এবং বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম প্রতি কেজির সিলিন্ডারে ৫৪ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
কোনো আলোচনা ছাড়াই তেলের দাম একতরফা বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বাড়বে দাবি করে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা না দিলেও জেলা পর্যায় থেকে মালিক-শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঢাকাগামী যান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে শুক্রবার থেকে।
সূত্র: বিবিসি