নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৬ নভেম্বর, ২০২১ ১১:১৫ : পূর্বাহ্ণ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ শনিবারও সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর প্রতিটি বাস স্টপেজে দেখা গেছে, গাড়ির জন্য অপেক্ষমান থাকা যাত্রীদের ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা।
রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া গুণে কর্মস্থলে যান তারা। মাঝে-মধ্যে দুয়েকটি দোতলা বিআরটিসি চলাচল করলেও তাতে তিল ধারণের জাগয়া ছিল না। বাদুর ঝোলার মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যান তারা।
রাজধানীর প্রতিটি বাস স্টপেজ ও মোড়ে শ শ মানুষকে দীর্ঘক্ষণ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে দীর্ঘপথ পায়ে হেটে গন্তব্যে রওনা হন।
মোবারক আলী নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী গুলশান থেকে যাবেন মহাখালীতে। কিন্তু কোনো বাস না পেয়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। আবার সিএনজির ভাড়া চাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। তাই হেঁটেই রওনা দিয়েছি।
গণপরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পোশাক শ্রমিকরাও। সকালে ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ পথ হেঁটে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছেন। অনেকে ভ্যানে করে হাজির হন কর্মস্থলে।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে ট্রেনে। কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকেই স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছেন। লাগেজ-ব্যাগ হাতে নিয়ে টার্মিনালে আসার পর জানলেন বাস চলাচল বন্ধ। সারি সারি করে পার্কিং করা হয়েছে সব বাস ও বন্ধ রয়েছে টিকিট কাউন্টারও। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের কর্মীরা; কোনো হাঁকডাক নেই।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আগামীকাল রোববার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পরিবহণ খাতের এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।
যদিও সরকারের তরফ থেকে শুক্রবার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে উপকরণ সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে লঞ্চ, ট্রেন ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল করেছে; যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন মালিক নেতারা। আমরা সেটি গুরুত্ব দিয়ে রোববার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছি। পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা ধর্মঘট পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতে পারেন না।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সমাধানে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারই এর সমাধান করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তারা দীর্ঘসূত্রতা করেছে। এ কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এর দায় মালিকদের নয়। তবুও অনিচ্ছাকৃত এ ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ করেই প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি দামে তেলে গাড়ি চালালে প্রতি প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হবে। তাই সারা দেশে সব বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া কীভাবে তাদের গাড়ি চালাতে বলবো।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। যা কার্যকর হয় ওইদিন রাত ১২টা থেকে। এরপরই কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিকরা।