শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

মিতু হত্যা: বাবুলের করা মামলায় নতুন মোড়, অধিকতর তদন্তের নির্দেশ আদালতের



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩ নভেম্বর, ২০২১ ৭:১০ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে আলোচিত মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার যে মামলা করেছিলেন, তানতুন মোড় নিয়েছে। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগের এই হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে গত মে মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দিয়ে সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে মামলাটির অধিকতর তদন্ত চেয়েছিলেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী।

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও বাবুল আক্তারের আইনজীবীর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানিতে আদালত পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি। একই সাথে বাবুল আক্তারের আইনজীবীর নারাজি আবেদনও নামঞ্জুর করেন। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

কিন্তু মামলাটি নতুন করে তদন্ত কে করবে সে বিষয়ে আদেশে উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান।

তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আদালতের আদেশটি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আদালত বলেছেন, মামলাটির তদন্ত চলবে। কিন্তু তদন্ত কে করবে সি বিষয়ে আদেশে কিছু বলা হয়নি। হয়তো একই সংস্থা মামলাটির অধিকতর তদন্ত করবে।’

আদালত বাদীপক্ষের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করলেও বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী মনে করছেন, আদালত কার্যত বাদীর নারাজি আবেদন গ্রহণ করে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন বাতিল করেছেন।

এই আইনজীবী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি তো চেয়েছি মামলাটির আরও তদন্ত হোক। কারণ এ মামলায় ৫১ জনের বেশি সাক্ষীর ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিলেও কেউই বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। হঠাৎ করেই সাড়ে চার বছর পর দুজনের সাক্ষী নিয়ে বলা হলো, এই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা সে কারণেই নারাজির আবেদন করেছি।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলাটির অধিকতর তদন্ত কে করবে আদালত সে বিষয়ে কিছু বলেননি। যদি একই সংস্থা ঘুরেফিরে তদন্ত করে একই প্রতিবেদন দেয় তাহলে আবারও নারাজি দিবো।’

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আদালত আদেশে কী বলেছেন সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি। তবে অধিকতর তদন্তে নতুন তথ্যও বেরিয়ে আসে। একই কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করলে যে আবার একই রিপোর্ট আসবে সেটা ঠিক নয়। প্রতিবেদনে আরও নতুন কোনো তথ্য যুক্ত হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তখন পদোন্নতি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বাবুল আক্তার। হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই। সেই সময় দুই আসামি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এছাড়া বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন।

পরে আদালতের আদেশে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ভার নেয় পিবিআই। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। এর পরদিন ১২ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

ঢাকায় ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই চট্টগ্রামে বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। এরপর ওইদিনই পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। যাতে বাবুলকে প্রধান আসামিসহ মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়। বাবুল আক্তার সেই মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর