শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

এবার সুর নরম করে রেলমন্ত্রী বললেন, ‘চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না’



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১ নভেম্বর, ২০২১ ৩:৩১ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের এক মাস আগে বিষোদগার করেছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সেই আন্দোলনকারীরা এবার রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সুর নরম করে ফেলেন। বললেন, ‘চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।’

আজ সোমবার দুপুরে রেল ভবনে ‘নাগরিক সমাজ-চটগ্রাম’ এর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

আন্দোলনকারীদের কাছে সুর নরম করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতাল করতে হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে নকশা অনুমোদন দিতে হবে। সিডিএ যদি নকশা না দেয় সেখানে হাসপাতাল হবে কী করে? আর অন্যান্য সংস্থার অনুমোদনে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে কোনও কিছু করা সম্ভব না।’

গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘এক সময় বিদ্যুৎ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, এখন হচ্ছে হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে। আমাদের একশ্রেণির মানুষ আছে যাদের কোনো কাজই ভালো লাগে না।’

নুরুল ইসলাম সুজন আজ আন্দোলনকারীদের বলেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প রেল মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির প্রকল্প। বিনিয়োগও বেসরকারি। সুতরাং রেল মন্ত্রণালয়ের এখানে করার কিছুই নেই। নাগরিক সমাজের দেওয়া যাবতীয় তথ্য উপাত্ত আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো, তিনিই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আমার অভিমত হচ্ছে, আইন ও চট্টগ্রামবাসীর সেন্টিমেন্টের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা যা কিছু করছি জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।’

‘চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না’

মতবিনিময়কালে মন্ত্রীর কাছে প্রকল্পের যাবতীয় অসঙ্গতি তুলে ধরে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন ‘নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’ এর সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

তিনি মন্ত্রীকে বলেন, ‘সিআরবি হচ্ছে ২০০৯ সালের গেজেট অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন। এখানে কোনও ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। আইনত নিষিদ্ধ। তাছাড়া এটি চট্টগ্রামের ফুসফুস এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রব, শহীদ মনোয়ার, শহীদ শেখ নজিরসহ ৯ শহীদের কবর এই সিআরবিতে। এখানে কোনও স্থাপনা হলে শহীদের কবর ধ্বংস হবে।’

ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের বিপক্ষে নই। হাসপাতাল চাই। তবে সিআরবিতে নয়। সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাবো।’

মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন ‘নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’ এর কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, আওয়ামীলীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন, নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’র যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, প্রণব চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম, অনির্বাণ দত্ত, অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হেলালউদ্দিন ও ব্যারিস্টার হারুনর রশীদ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছরের ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এলাকায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য চুক্তি সই ও অনুমোদন হয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এ প্রকল্প নির্মাণ করবে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পটি হবে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল ও সংলগ্ন খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের ছয় একর জমিতে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ১২ বছর। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে রেলওয়েকে আট কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ৫০ বছর পর হাসপাতালটি রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

গত জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকার জমি হাসপাতাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া উদ্যোগ নেওয়া হলে আন্দোলন শুরু হয়।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সিআরবি এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর