নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩০ অক্টোবর, ২০২১ ৫:৩২ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘাত বাধে।
হামলা ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন।
হামলায় গুরুতর আহত নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী ও এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আকিব হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।
সংঘর্ষে আহত অপর দুজন হলেন- মাহরুজ ও নাঈমুল ইসলাম। তারা সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিকেল ৫টার মধ্যে হল ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার।
আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে চমেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
চমেক ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে মন্ত্রী নওফেলের অনুসারী মাঈনুল ইসলাম নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী হোস্টেলে ভাত খেতে যান। এ সময় ডাইনিংয়ে তাকে হঠাৎ চড়-থাপ্পড় মারেন নাছিরের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে মাঈনুল ইসলাম তার কক্ষে চলে যাওয়ার পর সেখানে গিয়েও তাকে মারধর করেন ছাত্রলীগের অপরপক্ষের নেতা-কর্মীরা।
এ সময় নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা গিয়ে মাঈনুলকে রক্ষা করে। তখন সেখানে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় শাহীন ও সোয়েব নামে দুই ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। তারা নওফেলের অনুসারী।
এ ঘটনায় হোস্টেলে রাতে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।
আজ শনিবার চমেকের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার এ ঘটনার সমাধানের জন্য ছাত্রলীগের দুপক্ষ থেকে পাঁচজন করে ১০ জনকে তার কক্ষে ডাকেন। তারা চমেকের অধ্যক্ষের কক্ষে যাওয়ার পর ক্যাম্পাসে মন্ত্রী নওফেলের অনুসারী মো. আকিব নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সাবেক মেয়র নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে আকিবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এ সময় আকিবের মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাকে চমেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়।
চমেক ছাত্রলীগ সভাপতি হাবীবুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে মন্ত্রী নওফেলের সমর্থকরা হোস্টেলে আমাদের কর্মীদের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে। আমাদের দুজন কর্মীকে মারধর করে। এ ঘটনা নিয়ে আজ সকালে আমরা প্রিন্সিপালের কক্ষে বৈঠক করতে গিয়েছিলাম। তখন প্রিন্সিপালের কক্ষের সামনে আমাদের আসিফ বিন তাকিব নামে এক কর্মীকে মন্ত্রী নওফেলের সমর্থকরা মারধর করে। হামলা হলে তো আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হয়।
তিনি বলেন, মন্ত্রী নওফেলের সমর্থকরা গত কয়েক দিন ধরে হোস্টেলে আমাদের কর্মীদের নানা উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে আসছিলেন। গত দেড় বছর ধরে তারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করে আসছে।
মন্ত্রী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা কে এম তানভীর রাজনীতি সংবাদকে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে আমাদের এক কর্মী হোস্টেলে খেতে গেলে তাকে নাছির গ্রুপের কর্মীরা অহেতুক চড়-থাপ্পড় মারে। আজ সকালে ক্যাম্পাসে তারা আকিব নামে আমাদের এক কর্মীর ওপর লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
চমেক ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত দেড় বছর ধরে নাছির ও নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে।
সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে চমেক ক্যাম্পাসে প্রথমে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হয়।
এর আগে গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত ১২টি কক্ষ ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।