শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

২ মিনিটে চারটি গুলি চালিয়ে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেন ৩ অস্ত্রধারী


প্রতিনিধি, কক্সবাজার প্রকাশের সময় :২৩ অক্টোবর, ২০২১ ৩:৫০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও নেতা হিসেবে উত্থান ঠেকাতে রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)’র চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। একটি দুর্বৃত্ত সংগঠনের শীর্ষ নেতার নির্দেশে হত্যা মিশনে অংশ নেন ১৯ জন সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে তিনজন অস্ত্রধারী মাত্র ২ মিনিটেই চারটি গুলি চালিয়ে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

আজ শনিবার দুপুরে মুহিবুল্লাহর হত্যার কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেপ্তার ও হত্যার ছক সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাইমুল হক।

এর আগে শনিবার ভোরে মুহিবুল্লাহ হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হককে লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে এপিবিএন-১৪ এর সদস্যরা।

২ মিনিটেই চারটি গুলি করে মুহিবুল্লাহ হত্যা করেন ৩ অস্ত্রধারী

আজিজুল হকের স্বীকারোক্তিতে তিনি ছাড়াও হত্যায় সহযোগিতা করা কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর ডি ৮ ব্লকের আব্দুল মাবুদের ছেলে মোহাম্মদ রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন ও একই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাস ও নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুলের স্বীকারোক্তির কথা জানিয়ে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুহিবুল্লার হত্যার দুই দিন আগে মরগজ পাহাড়ে কিলিং মিশনের জন্য বৈঠক করে দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ৫ জনকে অস্ত্রসহ মোট ১৯ জনকে নির্দেশ দেওয়া হয় মিশন শেষ করার জন্য।’

নাঈমুল হক বলেন, ‘হত্যার কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন। তাঁকে থামাতে হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।’

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে আসামিদের মাত্র দুই মিনিট সময় লেগেছে জানিয়ে আজিজুলের বরাত দিয়ে এপিবিএনের অধিনায়ক বলেন, ‘ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের পর মাস্টার মুহিবুল্লাহ তাঁ শেডে ফিরে গেলে ধৃত মুরশিদ আমিন তাকে নিজের শেডে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলেন এবং কিছু লোক তার সঙ্গে অফিসে কথা বলবেন বলে ডেকে নিয়ে যান।’

এসপি বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ’র অবস্থানের তথ্য অপর দুই আসামি মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদকে জানিয়ে ওই এলাকা দ্রুত ত্যাগ করেন মুরশিদ আমিন। পরে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা সাত সদস্যের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দলকে অফিসে আসতে বলেন আনাছ ও নূর মোহাম্মদ।’

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ

নাইমুল হক বলেন, ‘দুর্বৃত্ত দলটির তিন জন অফিসে ঢোকে। এ ছাড়া আজিজুল, আনাছ, নূর মোহাম্মদ এবং অপর এক অস্ত্রধারীসহ চার জন অফিসের দরজায় অবস্থান নেন। অফিসে প্রবেশ করা এক অস্ত্রধারী ‘মুহিবুল্লাহ ওঠ’ বললে তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। এরপর প্রথম দুর্বৃত্ত একটি, দ্বিতীয় জন দুটি এবং সর্বশেষ দুর্বৃত্ত একটিসহ মোট চারটি গুলি করলে মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হত্যাকাণ্ডের পর অফিসের পেছনের দরজা দিয়ে আজিজ, আনাস, নূর মোহাম্মদসহ বাকিরা পালিয়ে যান।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-ওয়েস্ট (ডি ব্লকে) নিজ অফিসে অবস্থান করছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় বন্দুকধারীরা গুলি করে তাকে হত্যা করেন। এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে একজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মুহিবুল্লাহর মূল উত্থান হয় ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আগমনের বর্ষপূর্তিতে। ওই দিন তিনি লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

২০১৯ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ পান মুহিবুল্লাহ। সেসময় হোয়াইট হাউসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন তিনি। এরপর থেকে মুহিবুল্লাহ গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর