নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ অক্টোবর, ২০২১ ৮:১০ : অপরাহ্ণ
সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দেওয়ার বক্তব্য দিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবার তোপের মুখে পড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকনের।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সাঈদ খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ইসলাম থেকে নিজেকে ত্যাগ করে দেখেন দুই দিন মন্ত্রী থাকতে পারেন কিনা বাংলাদেশে, দেখেন এমপি থাকতে পারেন কিনা? বড় বড় কথা বলেন।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর আশুলিয়ায় বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের ১০ম বর্ধিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের আহ্বায়ক ও সাবেক আইজিপি মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ. কে. এম. রহমতুল্লাহ।
সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বলতে দেখা যায়, ‘ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রীয় ধর্ম না। এটা বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান লিখে গেছেন, সেই সংবিধানই থাকবে। এটার কোনো পরিবর্তন ওই এরশাদ, জিয়াউর রহমান, ওই সব মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর…এসব স্বৈরাচারের শাসনামল ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে। ওগুলো চলবে না। এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাহাত্তরের সংবিধানেই আমরা ফিরে যাবো।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন, ‘সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে ফুঁসে উঠলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনও। তিনি বলেন, ‘‘এই যে কয়েক দিন আগে এক প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে বলতে শুনলাম, ‘আমি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে দেবো, সংসদে তুলবো।’ ওনি কী বললেন? ওনি কিন্তু মুসলমান? নামও মুসলমান, আমরা জানিও মুসলমান।’’
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন বলেন, ‘আরে ভাই, আপনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে বাদ দিয়ে দেবেন? আপনি কি দলীয় ফোরামে আলোচনা করেছেন? দলীয় একটা ফোরাম আছে না? আপনি দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আপনি একজন প্রতিমন্ত্রী। আপনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা করেছেন? আপনি একজন সংসদ সদস্য। আপনি স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করেছেন? কোনো ফোরামেই করেননি। কিন্তু বলে দিলেন-আমি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানি না, এটা বাদ।’
এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘সরকারের অনুমতি নেননি, দলের অনুমতি নেননি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেননি। ফট করে একটা কথা বলে দিলেন। এ দায়িত্ব কি দল নেবে? এ দায়িত্ব কি সরকার নেবে? ফট করে একটা কথা বলেন যা ইচ্ছা তাই। এটা কি মুসলমানের কাজ হলো? কোনো মুসলমান এটা করতে পারে?’
ঢাকার প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আরে ভাই রাষ্ট্র তো দূরের কথা। রাষ্ট্র তো অনেক বড় ব্যাপার। ১৭ কোটি মুসলমানের দেশ। ৯৫ শতাংশ মুসলমান। সাহস থাকলে বলেন না-আমি ইসলামের থেকে নিজেকে খারিজ করে দিলাম। কলিজার পাটা যদি থাকে, তাহলে বলেন, আমি ইসলাম মানি না। বলে খারিজ হয়ে যান। আপনাকে কে আটকাবে? আমরা আটকাবো? আপনি খারিজ করে দেন, যান। নিজেকে মুসলমান দাবি করেন আবার ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলবেন।’
সাবেক এ মেয়র আরও বলেন, ‘এদেরকে আমি বলি-নামে মুসলমান। অনেকেই আছে নামে মুসলাম। কিন্তু আসলে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। আরে তোমার ইসলাম ভালো না লাগলে ছেড়ে চলে যাও। কেউ তোমারে রাইখা দেবো না বাইন্দা। এদেশে কোটি কোটি মুসলমান আছে। তুমি দুই চার জন (ইসলাম থেকে) চলে গেলে কী আসবে আর যাবে? কিন্তু দাবি করবা মুসলমান আর ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলবা এইটা আমরা মানব না।’
সাঈদ খোকনের বক্তব্য শুনতে এখানে ক্লিক করুন