রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আইন-আদালত

‘সাহেদের সঙ্গে মহব্বত কীভাবে হলো’, স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজিকে বিচারকের প্রশ্ন


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৭ অক্টোবর, ২০২১ ২:২০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সাহেদ করিমের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে আবুল কালাম আজাদ জামিন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাকে এই প্রশ্ন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসায় দুর্নীতির মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসায় দুর্নীতির মামলায় আত্মসমর্পণ করতে আদালতে আসেন আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু বিচারক অন্য মামলায় ব্যস্ত ছিলেন। এজন্য তিনি এ মামলায় শুনানি গ্রহণ করতে পারেননি। বিচারক তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে আসার জন্য জানান।

শুনানি চলাকালে আবুল কালাম আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারককে বলেন, ‘আমি জীবনে কোনো অন্যায় করিনি, আর কখনও অন্যায় করবো না। পৃথিবীতে করোনা‘র যে অবস্থা, সেই অবস্থায় সচিব মহোদয়ের নির্দেশে লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সক্ষমতা না থাকায় মানুষের জীবন বাঁচাতে এটা করতে হয়েছিলো। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মন্ত্রী ও সচিব মহদোয়ের সামনে স্বাক্ষর করা হয়েছিলো। সাহেদ যে একজন প্রতারক ছিলো, তা আমার জানা ছিলো না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাহেদ যে একজন প্রতারক ছিল, সেটা আমার জানা ছিল না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে ৫০টি করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মানবসেবার নামে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য টাকা নিচ্ছে রিজেন্ট হাসপাতাল, এমন অভিযোগ জানতে পারি। এরপর আমি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল দুটির শাখা বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছি।’

এরপর বিচারক আবুল কালামের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতারক সাহেদের সঙ্গে আপনার এতো মহব্বত কীভাবে হয়েছিলো?’

তখন আবুল কালাম বিচারককে বলেন, ‘স্বাক্ষর হওয়ার দিনে সাহেদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি আগে থেকে জানতাম না সাহেদ একজন প্রতারক ছিলেন।’

রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা হয়। মামলার পর গত বছরের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্তে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর একই আদালতে স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

চার্জশিটভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন-স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। দীর্ঘ একবছর পর এ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্স নবায়নবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরের লক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে অবৈধভাবে পারিতোষিক বাবদ রোগী প্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা নেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর