শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১:১০ : পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এরপর দীর্ঘ যাত্রায় পার করেছেন নানা চড়াই-উতরাই। কারাভোগ করেছেন, একাধিকবার গৃহবন্দী ছিলেন। চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তিন দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আজ তার ৭৫তম জন্মদিন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬৭ সালে বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ) থেকে এইচএসসি পাস করেন শেখ হাসিনা। তিনি সেখানকার ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-পিড়ন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর ও দুঃসহ দুঃখ-যন্ত্রণা।

এই ঝড়ের দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন। সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। বারবার কারান্তরীণ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে এরশাদের পতন হলে নতুন নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করে। এ সময় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেন শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে শেখ হাসিনার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

এবার জন্মদিনের সময় দেশে থাকছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গেছেন তিনি। তার অনুপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে জন্মদিনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নানান রঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। সেখানে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্জন তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, তেজগাঁও জকমালা রাণীর গির্জা এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর