নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৮:০১ : অপরাহ্ণ
সাগর মিজি (২৪) পড়াশুনা করেছেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু পরিচয় দিতেন মাস্টার্স ডিগ্রিধারী বলে। কাজ করতেন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির। পরিচয় দিতেন অবস্থাপন্ন ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী এবং বয়স্ক নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর বিভিন্ন এলাকা ও হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করতেন। ধর্ষণে বাধা দিলে হত্যা করতেও পিছপা হতেন না।
এ কারণেই গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ‘আমারী রিসোর্টে’ এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন সাগর মিজি।
এ ঘটনায় আজ শনিবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০-এর সদস্যরা।
এরপর এ নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
র্যাব বলছে, সাগর একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ (ক্রমিক ধর্ষক)। অনেক নারীকে মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০-এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহফুজুর রহমান জানান, সাগর মিজি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ‘আমারী রিসোর্ট’-এর ১০৮ নম্বর রুম ভাড়া নেন। হোটেল কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান, ২০ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী ঢাকা থেকে এখানে আসবেন, তখন তাকে অন্য একটি ডাবল রুম দিতে হবে। সে মোতাবেক ২০ সেপ্টেম্বর সাগর তার স্ত্রীর পরিচয়ে নিহত হওয়া নারীকে নিয়ে ৪০৮ নম্বর রুমে ওঠেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘পরে ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই কক্ষে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ওই নারীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। এরপর পুলিশকে খবর দেয় কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এরপর এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। তারপর থেকে আমরা সাগরকে ধরতে অভিযান চালাই। তার কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন ও নগদ ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষত ফেসবুকে সাগরের ফেইক (ভুয়া) অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি কিশোরী থেকে শুরু প্রাপ্তবয়স্ক নারীদেরও প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করতেন। কেউ যদি বাধা দিতেন, তাহলে তাদের তিনি শারীরিকভাবে আঘাত করতেন।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমারী হোটেলে ধর্ষণের পর হত্যাও তেমন একটি ঘটনা। ২০ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনা আমরা যতটুকু জেনেছি, সাগর যখন ওই নারীকে ধর্ষণ করতে থাকেন, তখন নারী তাকে বাধা দেন। একপর্যায়ে সাগর ভুক্তভোগী নারীকে গলা চেপে ধরে দেয়ালে আঘাত করেন। এরপর ওই নারী নিচে পড়ে যান। পড়ে যাওয়ার পর নারীর মাথায় পাশে থাকা গ্লাস দিয়ে দুই-তিনবার আঘাত করেন। সে সময় নারীর মৃত্যু নিশ্চিত করে সাগর পালিয়ে যান।’
মাহফুজুর রহমান বলেন,‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা সুনিশ্চিতভাবে পাঁচজনের ঘটনা জানি, যাদেরকে সাগর প্রলুব্ধ করে পরবর্তীতে ধর্ষণ করেন এবং শারীরিকভাবে আঘাতও করেন। এর মধ্যে একই পরিবারের দুই বোনও আছে। আমাদের ধারণা ও তার ফেসবুক অ্যানালাইসিস করে দেখেছি, তিনি এভাবে ১০ থেকে ১২টি ঘটনা ঘটিয়েছে।’