নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:০৪ : পূর্বাহ্ণ
বেসরকারি খাতের ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ইউনিয়ন ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান শাখার ভল্টের টাকার হিসাব মিলছে না। কাগজপত্রে ওই শাখার ভল্টে যে পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য রয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা কম পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল গত সোমবার ব্যাংকটির শাখায় গিয়ে এমন তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, কাগজপত্রে শাখাটির ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুনে পেয়েছেন ১২ কোটি টাকা। বাকি ১৯ কোটি টাকার ঘাটতি সম্পর্কে শাখাটির কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে যথাযথ কোনো জবাব দিতে পারেননি। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা তৎপরতা শুরু হয়।
সংশ্নিষ্টরা জানান, প্রতিদিন লেনদেনের শেষ ও শুরুতে ভল্টের হিসাব মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শাখা ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসার এবং ক্যাশ ইনচার্জের। ভল্টে টাকার হিসাবে কোনো গরমিল হলে তা মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার। অনেক সময় হিসাবের ভুলে সামান্য টাকার গরমিল হতে পারে। তবে বিপুল অঙ্কের টাকার গরমিল হলে তা ফৌজদারি অপরাধ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। তবে এই ঘটনায় থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরিও করেনি ব্যাংক।
গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতা চলে। এছাড়া পরিদর্শনে গিয়ে যারা এই তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন, তাদের চাপে রাখা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকটিতে কর্মরত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সাবেক কর্মকর্তা বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য পরিদর্শক দলের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেন। এ অবস্থায় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতা চলে। গতকাল এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা একাধিক দফায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। এরপর এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে পরিদর্শকরা টাকার গরমিল পেয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি, নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থাও নিচ্ছি। ব্যাংকের ভল্টে ঘোষণার কম টাকা থাকবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের ব্যাখ্যা তলব করবো। যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা না পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী, ভল্টের চাবি থাকে দুজনের কাছে। শাখা ব্যবস্থাপক, শাখা পরিচালনা ব্যবস্থাপক, ক্যাশ ইনচার্জ ও ক্যাশ অফিসার—এ চার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যেকোনো দুজনের কাছে চাবি থাকবে। দুজনের উপস্থিতি ও চাবি ছাড়া ভল্ট খোলা ও বন্ধের সুযোগ নেই। প্রতিদিন লেনদেন শেষে ঠিক কত টাকার কতটি নোট ভল্টে জমা রাখা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। সেই খাতাও থাকে ভল্টের ভেতরে। টাকার হিসাব মেলার পর কর্মকর্তারা প্রতিদিন ওই রেজিস্টারে স্বাক্ষর করেন। তাই ভল্টের টাকার গরমিলের সুযোগ কম।