শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

দায় মেটাতে না পারলে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল রাসেলের: র‍্যাব



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২:১৫ : অপরাহ্ণ

অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির দেনা দিন দিন বাড়ছিল। দায় মেটাতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল একে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ইভ্যালির সিইও রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের পর আজ শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।

রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ইভ্যালিকে ব্র্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। পরে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়সহ বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এ উদ্দেশ্যে তিনি ও তার স্ত্রী বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছেন। অন্যান্য পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে ওই কোম্পানি শেয়ারের অফার দিয়ে প্রলুব্ধ করে দায় চাপিয়ে দেওয়া।’

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তিন বছর পূর্ণ হলে শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে দায় চাপানোর পরিকল্পনা নেন রাসেল। দায় মেটাতে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বৃদ্ধি করার আবেদন একটি অপকৌশল মাত্র। সর্বশেষ তিনি দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করেছিলেন।’

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘রাসেল জানিয়েছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে এই ব্যবসাটি করে আসছিলেন। এটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বর্তমানে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ইভ্যালির নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি থেকে সরে এসেছে। ব্যবসায়িক উত্তরণ নিয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান ছিলেন। এর উত্তরণের ব্যাপারে তিনি আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বলতে পারেননি।’

র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন পণ্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোম্পানিটি নিয়েছিল ২১৪ কোটি টাকা। ইভ্যালির কাছে বিভিন্ন কোম্পানি ও গ্রাহকের পাওনা ১৯০ কোটি টাকা।

ইভ্যালির ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে র‍্যাব জানায়, ভাড়া করা স্পেসে ধানমণ্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে ভাড়া করা স্পেসে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যারহাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ এবং এক হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল, যা ব্যবসায়িক অবনতিতে বর্তমানে যথাক্রমে স্টাফ এক হাজার ৩০০ জনে এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মচারীদের একপর্যায়ে মোট মাসিক বেতন বাবদ দেওয়া হতো প্রায় পাঁচ কোটি টাকা; যা বর্তমানে এক দশমিক পাঁচ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি ও তার স্ত্রী পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক পাঁচ লাখ টাকা করে বেতন নিয়ে থাকেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ইভ্যালির সিইও রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

জানা গেছে, রাসেল ও তার স্ত্রীকে র‌্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ দুপুরে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে।

জানা যায়, রাসেল ২০০৭ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এমবিএ সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি শুরু করেন।

প্রায় ৬ বছর চাকরির পর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে প্রায় এক বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করেন এবং পরে তিনি ওই ব্যবসা বিক্রি করে দেন। ২০১৮ সালে আগের ব্যবসালব্ধ অর্থ দিয়ে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু হয়। কোম্পানিটির তিনি একাধারে এমডি ও সিইও এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর