বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ: কমিটি ঘোষণা করতে কেন বিলম্ব হচ্ছে কেন্দ্রের



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:২০ : পূর্বাহ্ণ

স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সম্মেলন হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। এ নিয়ে কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো কারণে এর মধ্যে না হয়, তাহলে এ মাসের মধ্যে কমিটি আর ঘোষণা হবে না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা এখনও সম্মতি পাইনি। হয়তো এ সপ্তাহের মধ্যে পেতে পারি। আশা করি, এ মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে যেহেতু আওয়ামী লীগের দুটি ধারা আছে, তাই আমরা সমন্বয় করে সুন্দর একটা কমিটি উপহার দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তো আর নেতৃত্ব চূড়ান্ত করবেন না। তিনি আমাদেরকে একটা গাইডলাইন দেবেন।’

গত ১৯ জুন নগরীর লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম ত্রি-বার্ষিক ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

নতুন কমিটি না হওয়াতে চট্টগ্রাম নগরীতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। গত ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে নগরীতে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটির ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি।

চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ প্রত্যাশী নেতারা সবাই তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। কখন কেন্দ্র থেকে কমিটির ঘোষণা আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।

গত জুলাই মাসের শেষ দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের নেতাদের কাছে বার্তা আসে, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশীদের শর্ট লিস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন।

কেন্দ্রের এ বার্তা তখন চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা বিশ্বাস করলেও তা নিয়ে এখন অনেকের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কমিটির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া নিয়ে আমি কনফিউজড। বলয় থেকে হয়তো চাপ দেওয়া হয়েছে, এখান থেকে এটা দিতে হবে। তারা হয়তো সেটা দিতে চাচ্ছে না। এটা নিয়ে হয়তো দর-কষাকষি চলছে। আসলে এই কমিটি নিয়ে সম্মেলনের আগে কেন্দ্রের হোমওয়ার্ক করা উচিত ছিল। তারা যতোটা সহজ মনে করেছিলেন, এখন কমিটি দেওয়া ততোটা সহজ হচ্ছে না। অথচ তারা আমাদেরকে তখন দোষারোপ করেছিলেন। আমরা কেন কমিটি করতে পারিনি সেটা এখন তাদের অনুভব করা উচিত বলে মনে করি।’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সম্মেলনের পর কেন্দ্র থেকে প্রথমে বলা হয়েছিলো জুলাই মাসের মধ্যে কমিটি দেওয়া হবে। কিন্তু হয়নি। এরপর বলা হলো আগস্টের পরেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আগস্ট মাস শেষ হওয়ার পরও কমিটি আসছে না। দিচ্ছি, দিবো-এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে কমিটি।’

চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের প্রশ্ন, কমিটির তালিকা যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটা চূড়ান্ত হতে এতো দিন সময় লাগার কথা নয়।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটা ইউনিটের কমিটির তালিকা যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, তাহলে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মতো একজন দক্ষ সাংগঠনিক নেতা রয়েছেন, সেখানে একটা ইউনিটের কমিটির তালিকা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার কথা না।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির অপর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা হয়তো নগরীতে আওয়ামী লীগের দুই ধারার চাপের মুখে পড়েছেন। কারণ সামনে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে যদি তৃতীয় ধারার আবির্ভাব হয়, তাহলে নগর আওয়ামী লীগে এর প্রভাব পড়বে। তাই হয়তো দুই ধারার নেতারা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে তৃতীয় ধারাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে, সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেন্দ্র নতুন একটা ধারা নেতৃত্বে আনতে চায়। চাপের মুখে পড়ে তারা হয়তো কৌশলে সময়ক্ষেপণ করছেন।

এদিকে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়াতে কেন্দ্রের ওপর বিরক্ত কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতারা। কমিটি গঠনে বিলম্বের পেছনে রহস্য খুঁজছেন অনেকে।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য ও নতুন কমিটির সভাপতি পদে প্রত্যাশী সাদেক হোসেন পাপ্পু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তারা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। একদিকে নগর আওয়ামী লীগের দুই বলয়ের চাহিদা, অন্যদিকে আছি আমরা। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনায় আমাদেরকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। কেন্দ্র আসলে কমিটির সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে।’

নতুন কমিটির সভাপতি পদে প্রত্যাশী দেবাশীষ নাথ দেবু বলেন, ‘কমিটি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আছি। কেন্দ্র থেকে শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু কেন যে কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না তা বুঝে উঠতে পারছি না।’

নতুন কমিটির সভাপতি পদে অপর প্রত্যাশী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর ইউনিটের কমিটি নিয়ে কেন্দ্র যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য হয়তো তারা সময় নিচ্ছে। সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে একটা ইমেজ গড়ে উঠেছে, কেন্দ্র হয়তো সেটা ধরে রাখতে চাইছে।’

উল্লেখ্য, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ৪১ জন সভাপতি ও ৩৩ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। সেদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু প্রার্থীদের সমঝোতার জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থীরা কেন্দ্রের হাতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ভার ছেড়ে দেন।

দলীয় সূত্রের খবর, সম্মেলনের আগে নগর আওয়ামী লীগের দুই বলয় থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু ২০ বছর পর নেতা-কর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ ভার্চুয়াল সম্মেলনের দৃশ্য দেখে মত পরিবর্তন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ২০ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করে আসা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের মূল্যায়নের কথা ভাবেন তারা। সম্মেলনের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে শেষ মুহূর্তে পাল্টে যায় সমীকরণ।

আরও পড়ুন: কমিটি গঠনে তৃতীয় ধারা নিয়ে নতুন সমীকরণ

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন শীর্ষ নেতা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সার্বজনীন নেতাদের নিয়ে কমিটি করতে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব দেন। তারা কেন্দ্রে তৃতীয় ধারার পদ প্রত্যাশীদের একটি তালিকাও পাঠান। কেন্দ্রকে তারা জানিয়েছেন, সার্বজনীন নেতাদের নিয়ে কমিটি না করলে সংগঠনে একাধিক ধারা-উপধারা সৃষ্টি হবে এবং এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

২০০১ সালের ১৪ জুলাই অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল। এটি ছিল মহানগরে সংগঠনটির প্রথম কমিটি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন আয়োজনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ওই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর গত ২০ বছরেও চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়নি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর