সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন ছয় বছর আগের এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে আসামি প্রবীর সিকদার আদালতে উপস্থিত হন। এরপর তার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন।
রায় পড়া শেষ হলে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, যাদেরকে এ মামলায় ‘ভিকটিম’ বলা হয়েছে, তারা নিজেরা এ মামলা করেননি বা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কেউ এ মামলার বাদী নন। এমনকি তারা এ মামলায় সাক্ষীও ছিলেন না।
মামলা করেছেন দূরের একজন, যার এ অভিযোগে মামলা করার এখতিয়ার-ই নেই।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রবীর সিকদার বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’
২০১৫ সালে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে প্রবীর সিকদারকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
সে রাতেই তাকে ফরিদপুর নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়।
ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা আইনজীবী স্বপন পাল মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রবীর সিকদার ফেসবুকে লেখার মাধ্যমে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন।
এর পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. মনির হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ওই বছরের ৪ আগস্ট প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার আরজিতে বাদী বলেন, প্রবীর সিকদার গত ১০ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ছিল ‘আমার জীবনের শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’।
শিরোনামের নিচে তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন-এমন তিনজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন।
এদের মধ্যে এক নম্বরে আছেন এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম।
স্ট্যাটাসটি পড়ে আমার দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে, প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে অসত্য লেখা লিখে মাননীয় মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।
লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে। যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রবীর সিকদারের বাবাসহ তার পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করে।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার পর সন্ত্রাসীদের হামলায় তাকে একটি পা হারাতে হয়।