বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৩ পৌষ, ১৪৩১ | ১৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা খেলা

এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস



নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৭:২৫ অপরাহ্ণ

ব্যাটিং ব্যর্থতায় গত ম্যাচে সিরিজ নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে আর সুযোগ হাতছাড়া করেনি লাল-সবুজের দল। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়লো বাংলাদেশ।

আজ বুধবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই ৩-১ ব্যবধানে জিতল মাহমুদউল্লাহর দল। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর।

আজ বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ৯৩ রান গড়ে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ১৯.১ ওভারে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। জয় তুলে নিলেও ৯৪ রান তুলতে ১৯.১ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

অবশ্য রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল হতাশার। মাত্র ৯৪ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ।

বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। দলীয় ৮ রান তুলতেই বিদায় নেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান লিটন দাস। ধারাবাহিক ব্যর্থ থাকা লিটন কোল ম্যাকনকির বল সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন। সুযোগ হাতছাড়া না করে ক্যাচ নিয়ে লিটনকে সাজঘরের পথ দেখান অ্যালান।

১১ বল খেলে লিটন নিয়েছেন ৬ রান। দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লিটনের পর টপঅর্ডারে হতাশ করলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে যান মুশফিক। রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি।

একই ওভারে বাঁহাতি এই স্পিনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ইয়র্কার বানিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন সাকিব। ৮ বলে ১ চারে তিনি করেন ৮। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান তোলে বাংলাদেশ।

সতীর্থদের আশা-যাওয়ার মিছিলে দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ নাঈম। মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন তিনি। নাঈম প্রতিরোধ ভাঙে রান আউটে। ১৫ ওভারে রান আউটের হতাশা নিয়ে ফেরেন তিনি। ৩৫ বলে ২৯ রান করেন নাঈম।

নাঈম

নাঈম ফেরার পর শেষ পর্যন্ত আফিফকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংস শেষে ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশকে মাত্র ৯৪ রানের লক্ষ্য দেয় টম ল্যাথামের দল। নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজের বোলিং তোপে ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।

আগের তিন টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা দাপট দেখাতে না পারলেও চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে কিউই ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমতো যমদূত উঠেন নাসুম। তার স্পিন ঘূর্ণিতে দিক হারিয়েই মূলত অল্প রানে গুটিয়ে গেছে সফরকারীরা।

বল হাতে প্রথম ওভার মেডেন নিয়ে সূচনা করেন নাসুম আহমেদ। কোনো রান দিয়ে তুলে নেন এক উইকেট। নাসুমের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে সুইপ করে খেলতে চেয়েছিলেন কিউই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র। তিনি ব্যর্থ হন। শর্ট ফাইন লেগ থেকে কিছুটা দৌড়ে দিয়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

রানের খাতা খোলার আগে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

প্রথম ওভারে উইকেট হারানোর পর ফিন অ্যালানের ব্যাটে চাপ সামলানোর চেষ্টা করে নিউজিল্যান্ড। সাকিব আল হাসানের ওভারে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর আভাস দেন অ্যালান। কিন্তু পারলেন না থিতু হতে। নাসুমের পরের ওভারেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন।

অ্যালানের ক্যাচটিও মুঠোয় নেন সাইফউদ্দিন। ৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন অ্যালান।

পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ২২ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু অধিনায়কের প্রতিরোধ বেশিদূর যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মেহেদী হাসান।

তরুণ এই অফ স্পিনারের বল উইকেট লাইন থেকে সামনে এসে খেলতে চেয়েছেন ল্যাথাম। কিন্তু বল টার্ন করে বেরিয়ে চলে যায় কিপার নুরুল হাসানের হাতে। দেরি না করে স্ট্যাম্প করেন নুরুল। এক চারে ২৬ বলে ২১ রান করেন ল্যাথাম।

১৬ রানে দুই উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড় যায় নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে কিছুটা পথ দেখান দুই ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম ও উইল ইয়ং। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়েন।

নাসুম আহমদ

প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট নেয়ার পর নিজের চতুর্থ ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন নাসুম। পরপর দুই বলে ফেরান হেনরি নিকোলস ও কলিন গ্র্যান্ডহোমকে।

হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল এই স্পিনারের সামনে, তবে নতুন ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল লাফিয়ে উঠা বলটি ব্যাট না বাড়িয়েই ছেড়ে দেন। ওই ওভারে কোনো রান না দিয়ে জোড়া শিকার করেন নাসুম।

এরপর ১৬তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই ব্লান্ডেলকে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজ। মিডঅনে থাকা নাঈম শেখের দারুণ ক্যাচে ১০ বলে ৪ রান করেন ফেরেন এই ব্যাটসম্যান।

একই ওভারের শেষ বলে কোল ম্যাককনচিকে ফেরান মোস্তাফিজ। নিজে বল করে নিজেই দারুণভাবে ক্যাচটি ধরেন।

শেষ দিকে মুস্তাফিজের ডেথ বোলিংয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৯৩ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।

৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন নাসুম। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সেরা বোলিং ফিগার। ১২ রানে দিয়ে মুস্তাফিজও নিয়েছেন ৪ উইকেট।

এ ছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী ও সাইফউদ্দিন। টানা দুই ম্যাচে উইকেট পাননি সাকিব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ৯৩/১০ (রবীন্দ্র ০, অ্যালান ১২, ল্যাথাম ২১, ইয়ং ৪৬, দি গ্র্যান্ডহোম ০, ব্লান্ডেল ৪, ম্যাকনকি ০, হেনরি ১, অ্যাজাজ ৪,টিকনার ২ ; মেহেদী ৪-০-২১-১, নাসুম ৪-২-১০-৪, সাইফউদ্দিন ৩-০-১৬-১, মুস্তাফিজ ৩.৩-০-১২-৪, সাকিব ৪-০-২৫-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)।

বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪ (নাঈম ২৯, লিটন ৬, সাকিব ৮, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*, আফিফ ৬*; বেনেট ৩-০-১৭-০, ম্যাকনকি ৩.১-০-৩৪-১, রবীন্দ্র ৪-০-৮-০, দি গ্র্যান্ডহোম ৯-০-১৩-০, অ্যাজাজ ৪-০-৯-২, টিকনার ২-০-)।

ফল: ছয় উইকেটে বাংলাদেশ জয়ী।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ

সিরিজ: ৩-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর