নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৭:৩০ : অপরাহ্ণ
শেষ ২ বলে ১৩ রান দরকার নিউজিল্যান্ডের। এমন অবস্থায় বিমার মারলেন মোস্তাফিজ! মাথার ওপর দিয়েই ভেসে যেতে থাকা বলে ব্যাট লাগিয়ে দিলেন ল্যাথাম। উইকেটের পেছন দিয়ে চার! নো বলও হলো, ৫ রানও এলো, ফ্রি-হিটও পেল নিউজিল্যান্ড। ফ্রি-হিটে ল্যাথামের পায়ে বল মারলেন মোস্তাফিজ। ল্যাথাম লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে নিলেন আরও দুই রান। শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৬ রান।
এ অবস্থায় ম্যাজিক দেখালেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ!
জোরের ওপর অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে বল করেছেন মোস্তাফিজ। ল্যাথাম নিতে পারলেন ১ রান। বাংলাদেশ জিতে গেলো ৪ রানে।
এই জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
আজ শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২.৩ ওভারে দলীয় ১৬ রানে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র। সাকিবের পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন মেহেদি হাসান। তার শিকার হন টম বান্ডেল। ৩.১ ওভারে দলীয় ১৮ রানে ফেরেন এ ওপেনার।
১৮ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে উইলি ইয়াংকে সঙ্গে নিয়ে ৪৭ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটান সাকিব। তার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ২৮ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন ইয়াং। ১০.৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৬১ রান।
পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারো সেই নাসুম আহমেদের স্পিনে বিভ্রান্ত হন কলিন ডি গ্রান্ডহোম। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১ রানে করে নাসুমের বলে আউট হওয়া নিউজিল্যান্ডের এ তারকা ব্যাটসম্যান এদিনও সেই একই বোলারের স্পিনে শিকার হন। দ্বিতীয় ম্যাচে ফেরেন ১০ বলে মাত্র ৮ রান করে। তার বিদায়ে ১৪.২ ওভারে ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারায় কিউইরা।
নাসুমের পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন মেহেদি হাসান। তার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন হেনরি নিকোলাস। ১৫.৩ ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন নিকোলাস।
এরপর কলিন ম্যাককলিনচকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ২৮ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। এই জুটিই দলকে জয়ের পথে নিয়েছিল।
শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম চার বলে দেন ৭ রান। পরের দুই বলে কিউইদের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। পঞ্চম বলটি ‘নো’ করেন ফিজ। শেষ দুই বলে নিউজিল্যান্ডকে ৮ রান করতে হতো। পঞ্চম বলে দুই রান নেয় নিউজিল্যান্ড।
জয়ের জন্য শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে হতো নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথামকে। কিন্তু তিনি এক রানের বেশি নিতে পারেননি। ৪ রানের জয় পায় টাইগাররা।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট খুইয়ে ১৪১ রান করে বাংলাদেশ।
সাবধানী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের শুরুতে শুরুটা ভালো করেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। আগের ম্যাচে মাত্র এক রানে আউট হওয়া দুই ওপেনার এবার টিকে ছিলেন লম্বা সময়।
যদিও শুরুতেই বিপদে পড়তে পারতেন লিটন দাস। ১.৩ ওভারের সময় ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তিনি। ওই সহজ ক্যাচ মিস করে লিটনকে বাঁচিয়ে দেন ডি গ্র্যান্ডহোম।
জীবন পেয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান লিটন। যদিও পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে খুব একটা রান আসেনি। এরপর অবশ্য দুজনই হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেন। বেশ সময় পর্যন্ত টিকেও যান। কিন্তু থিতু হয়ে স্টাম্প হন লিটন।
৯.৩ ওভারে কিউই বোলার রাচিন রবীন্দ্রর স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে আউট হন লিটন দাস। রবীন্দর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বল অফে সরে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ব্যাটে-বলে মেলেনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রান করেন লিটন ।
দলীয় ৫৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে উপরে এসে ৯.৪ ওভারে রাচিন রবীন্দ্রর বলেই শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিক। দুদান্ত শুরুর পর যেনো হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে টাইগারদের ব্যাটিংয়ে।
এরপর চারে নেমে আজ থিতু হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ১২ রানের মাথায় ক্যাচ তুলে দেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যেতে পারতেন সাকিব। তার উড়িয়ে মারা বল লং অফে ক্যাচ ধরতে গিয়ে তালগোল পাকিয়েছিলেন বেন সিয়ার্স। ভাগ্য ভালো থাকায় ক্যাচ মিস হয়ে যায়নি।
এত ভালো শুরুর পর ১৩ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর নাঈমের সঙ্গে হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
উইকেটে থেকে চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন ওপেনার নাঈম। ১৬তম ওভারে নাঈমের প্রতিরোধ ভাঙেন সেই রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর বলে ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন নাঈম। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৩৯ রান করেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া রবীন্দ্র মোট তিনটি উইকেট নেন।
এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুব বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেনি। তিনি গ্র্যান্ডহোমের বলে লং অনে ধরা পড়েন এজাজ প্যাটেলের হাতে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ বলে ৩ রান।
তবে লড়াই করতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি ৩৭ রানে অপরাজিতা ছিলেন। অধিনায়কের সঙ্গে ১৩ রান করেন নুরুল হাসান সোহান।
বল হাতে কিউইদের হয়ে রাচিন রবীন্দ্রর ৩ উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (লিটন ৩৩, নাঈম ৩৯, মুশফিক ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, আফিফ ৩, সোহান ১৩; রবীন্দ্র ৪-০-২২-৩ , ম্যাকনকি ৪-০-২৪-১, বিন ১-০-১১-২, বেনেট ৪-০-৩২-১, অ্যাজাজ প্যাটেল ৪-০-২০-১, ব্রেসওয়েল ৩-০-৩০-০)।
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৭/৫(ব্লান্ডেল ৬, রবীন্দ্র ১০, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮, নিকোলস ৬, ল্যাথাম ৬৫, ইয়ং ২২, ম্যাকনকি ১৫ ; সাকিব ৪-০-২৯-২, মেহেদী ৪-০-১২-২, সাইফউদ্দিন ৪-০-৩৬-০, মুস্তাফিজ ৪-০৩৪-০, নাসুম ৩-০-১৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)।
ফল: ৪ রানে জয়ী বাংলাদেশ।