প্রতিনিধি, বরিশাল প্রকাশের সময় :২১ আগস্ট, ২০২১ ৯:৩৭ : অপরাহ্ণ
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গত বুধবার রাতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, আমি যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমার এই চেয়ারে থাকার অধিকার নেই। প্রয়োজনে দলের পদ ছেড়ে দেবো তবুও দলের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না।’
এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন কিনা এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত রয়েছি, বললেই থানায় গিয়ে হাজির হবো। আমার বাসা ঘেরাও করার দরকার নেই। আমি পরিচিত লোক, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক, আমার চেহারা বাংলাদেশের সবাই চেনে, আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই। এটা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি, এ বাড়িতে আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো? ক্ষমতায় আমার দল। এখানে আমি কঠিন হলে সেটা সরকারের ওপরে যাবে, দলের বদনাম হবে। বরিশাল শান্তির শহর। আমি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। নাগরিকেরা ভালো থাকুক, এটাই চাই। এই কাজে ব্যর্থ হলে আমি পদত্যাগ করে চলে যাবো।’
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা কাজে যোগ দিন। আপনারা কাজ না করলে নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সমস্যা হবে নগরবাসীর।’
এ সময় তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমি বার বার বলেছি ষড়যন্ত্রের কথা। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিন বছরের ষড়যন্ত্র চলাকালে একনেকে ১৩০ কোটি টাকা পাস হলেও টাকা পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ না পেয়েও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনোভাবেই পেরে উঠতে না পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে এসেছে।’
ব্যানার অপসারণ প্রশ্নে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘ব্যানার লাগানো দলের সিদ্ধান্ত ও অপসারণও দলের সিদ্ধান্ত। এটা দলের ব্যানার, ইউএনও সরকারি চাকরি করেন। এটা বাধা দেওয়ার তিনি কেউ না।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পোস্টার অপসারণ নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের সাথে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় গুলি চালায় আনসার সদস্যরা। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া আহত হন ৩০ জন।
এর জের ধরে ইউএনওর বাসায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ এসে ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ নির্বিচারে সেখানে লাঠিচার্জ শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধাওয়া পালটা ধাওয়া শেষে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। দুটি মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। এছাড়া মামলাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৯৪ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।