শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ

সেদিন মুহুর্মুহু গ্রেনেডে কেঁপে ওঠে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২১ আগস্ট, ২০২১ ১:০৩ : পূর্বাহ্ণ

আজ ২১ আগস্ট, দেশের ইতিহাসে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ১৭ বছর আগে এই দিনে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে তৈরি হয় এক বিভীষিকা। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে ওই হামলায়।

২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, যা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নামে পরিচিত।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সেদিন সভায় সবশেষে বক্তব্য দিতে ওঠেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে যখন তিনি মঞ্চ থেকে নামছেন, তখন কয়েকজন ফটো সাংবাদিক তাকে ছবির জন্য পোজ দিতে অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধেই আবার মঞ্চে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তখনই শুরু হয় হামলা। একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে গ্রেনেড। মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ আর রক্তে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সেই সড়কটি। মানুষের কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে আসে আকাশ। পরপর ১৩টি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে পারলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী মারা গিয়েছিলেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন অন্তত ৪০০ জন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। পরে মারা যান আরো ৮ জন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইভি রহমান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ

আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।

এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন-আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।

জজ মিয়া নাটক
এই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর সন্ধানদাতার জন্য সে সময় চারদলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

নারকীয় সেই হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। ২২ আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলা করতে গেলে তা গ্রহণ করেনি পুলিশ। মামলাটি তদন্তের ভার পরবর্তী সময়ে ন্যস্ত হয় সিআইডির হাতে।

শুরু থেকেই তদন্তটি প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগও আনা হয় তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।

সেই সময় সরকারে থাকা বিএনপির বিভিন্ন নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্যে হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন। তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ হামলার প্রায় ১০ মাস পর একজন আসামিকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় সিআইডি। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় জজ মিয়া নামে এক তরুণকে। সিআইডি সে সময় জানায়, ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের বীরকোট গ্রাম থেকে জজ মিয়াকে আটক করা হয়েছে।

এরপর ১৭ দিন ধরে চলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ। রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। সেই জবানবন্দিতে জজ মিয়া বলেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। আর বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ ও মুকুল।

এ ঘটনার পর তদন্ত প্রায় শেষ করে সিআইডি। কিন্তু জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনের একটি বক্তব্যে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে।

এতেই ফাঁস হয়ে যায় জজকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির পরিকল্পনা। সে সময় এটি নিয়ে সারা দেশেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে মামলাটি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পরে এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ ছাড়াও ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর যোগাযোগের বিষয়টিও বের হয়ে আসে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর