নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২১ আগস্ট, ২০২১ ২:৩০ : অপরাহ্ণ
‘একটার পর একটা গ্রেনেড। আমি দেখলাম রক্ত। তিনটা ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড, তারপর আবার। মনে হচ্ছে শেষ নেই। এ যেন কেয়ামতের মতো। আল্লাহ কীভাবে যেন হাতে তুলে বাঁচাল…’
১৭ বছর আগে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ঘটনার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখলাম হানিফ ভাই রক্তাক্ত। ওনার ছেলে খোকনসহ প্রত্যেকে আহত। যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাবো, দরজা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো, তখনই গুলি হলো। মাহবুব মারা গেলো। গাড়ি একটানে চালিয়ে নিয়ে আসলো। আহত হয়ে মানুষ যখন ছটফট করছে, পুলিশ এসে লাঠি চার্জ করল। টিয়ারগ্যাস মারতে শুরু করল। যেখানে এরকম ঘটনায় পুলিশ এগিয়ে আসে সাহায্যে, সেখানে দূর থেকে যারা ছুটে আসছে তাদের বাধা দেয়া হলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার যে ড্রাইভার ছিল মতিন, সাহসী ছিল, সুধাসদনে আসার পরই গাড়িটা বসে গেল। রেহানা আমাকে দেখে চিৎকার। ওখানে দাঁড়িয়েই কে কোথায় তা খোঁজ নিতে শুরু করি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য সেদিন বিএনপি মাইন্ডের কোনো ডাক্তারই ঢাকা মেডিক্যালে ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি হাসপাতাল) কোনো আহতকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। আর ঢাকা মেডিক্যালে কোনো বিএনপির ডাক্তার চিকিৎসা দেয়নি। আমাদের মাইন্ডের যারা তারা ছুটে এসে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কিসের গণতন্ত্র। একটা প্রকাশ্য জনসভায় কীভাবে আর্জেস গ্রেনেড মারতে পারে? একজন আর্মি অফিসার যখন পড়ে থাকা একটা গ্রেনেড নিয়ে বলল, এটা আলামত হিসেবে রাখতে হবে। তাকে ধমক দেয়া হলো। বিস্ফোরণ স্থান ধুয়ে মুছে সব পরিষ্কার করা হলো। কোনো আলামত তারা রাখতে চায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘এই ঘটনায় বিএনপি সরকার আলামত নষ্ট করে ফেলে। ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয় এবং জজ মিয়া নাটক সাজায়। তখন সংসদেও কথা বলতে দেয়নি বিএনপি-জামায়াত। উল্টো এই ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই দিনই চারজনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া ও তারেকের তত্ত্বাবধায়নে তাদের পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় তখনকার পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবাই জড়িত ছিল।’
২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা না থাকলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল আমাকে হত্যা করে, দলের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা, নিশ্চিহ্ন করা।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বাবার পথ ধরেই এ দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি। কয়েকবার মুত্যুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছি, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। এতো বাধা অতিক্রম করে এসেছি। এখন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ।’
আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
আরও পড়ুন:
https://rajnitisangbad.com/2021/08/21/%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a7%81-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a1/