শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রকে বোকা বানিয়ে দিয়েছেন এই মোল্লা বারাদারই!



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৭ আগস্ট, ২০২১ ৪:৪৫ : অপরাহ্ণ

মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার। যিনি তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান। তার কৌশলের দক্ষতা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় স্বীকৃত।

অনেকে বলছেন, খোদ যুক্তরাষ্ট্রকে এই মোল্লা বারাদারই বোকা বানিয়ে দিয়েছেন।

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন তার সঙ্গে কথা বলে তালেবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছিল। তার আশ্বাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ২০১০ সালে পাকিস্তানের জেলে বন্দি বারাদারকে মুক্ত করার নির্দেশও দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এই চুক্তিতে তালেবানদের ক্ষমতা সংক্রান্ত সমঝোতায় আসার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের তরফে। সেনা প্রত্যাহারের এই সময়সীমা ছিল আগামী ৩১ আগস্ট।

আমেরিকাকে বারাদার বুঝিয়েছিলেন, তালেবানও আফগানিস্তানে হিংসার বিরোধী। তারাও আসলে শান্তিই চায়। বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকাকে দিব্যি বোকা বানালো বারাদার।

তখন অনেকেই এই চুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ তখন এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা অবশ্য গত রোববার (১৫ আগস্ট) তালেবানের কাবুল দখল ও আফগান সরকার পতনের পর বলছেন, বারাদর আসলে ওই চুক্তি করেছিলেন সময়ক্ষেপণের জন্য!

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র যতদিনে আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা সরিয়েছে, ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিয়েছে তালেবান। কারণ সেনা সরলেই আক্রমণ করবে বলে। আসলে কৌশলী মোল্লা বারাদর বরাবরই ধৈর্যশীল। কারণ, তিনি এটা জানেন ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’

দেখা গেলো, শেষ হাসি হাসলেন বারাদারই। গত রোববার রাতে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবনের দখল নেওয়ার পর বারাদরই বলেছেন, ‘এই তো সবে শুরু। তালেবানকে আসল পরীক্ষা এবার দিতে হবে। দেশের মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে তালেবানকে।’

১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছিল তালেবান। গত রোববার রাতে তালেবান যেভাবে কাবুল দখল করেছে, ঠিক সেভাবে আফগানিস্তানে শুরু হয় তালেবানি শাসন। তখন বারাদর দায়িত্ব নেন আফগান সেনাদের।

২০০১ সালে মার্কিন সেনারা যখন আফগানিস্তান থেকে তালেবানকে উৎখাত করে, তখন বারাদার ছিলেন আফগানিস্তানের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সত্যি হলে বারাদার হবেন এবার আফগান প্রেসিডেন্ট। আর যদি তাই হয়, তাহলে এই প্রথমবারের মতো কোনো শীর্ষ পদে বসবেন এই তালেবান কমান্ডার। যিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের সহযোদ্ধা। সম্পর্কে মোল্লা ওমরের ভায়রা ভাই।

যুক্তরাষ্ট্রকে বোকা বানিয়ে দিয়েছেন এই মোল্লা বারাদারই!

প্রেসিডেন্ট হয়ে বারাদর যে দেশের নেতৃত্ব দেবেন, তার নাম হবে ‘ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান।’

তালেবানদের কাছে তিনি ‘মোল্লা বারাদার আখুন্দ’ নামে পরিচিত। ফার্সি শব্দ বারাদার যা ইংরেজিতে ব্রাদার। যার অর্থ ভ্রাতা। আখুন্দ শব্দটিও ফার্সি। আখুন্দ ফার্সি ভাষায় সাধারণত পণ্ডিতদের কথাই বোঝানো হয়।

মোল্লা আব্দুল গনি বারাদরের জন্ম ১৯৬৮ সালে কান্দাহার প্রদেশে। জন্মসূত্রে এই তালেবান নেতা একজন দুররানি পশতুন। দুররানিরা আফগানিস্তানের আদি গোষ্ঠী। তাদেরই পূর্বপুরুষ আহমেদ শাহ দুররানি আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বারাদার এই দেশের স্বপ্ন দেখছেন সেই ১৯৯২ সাল থেকে। আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান’ বানানোর লক্ষ্যে সেই সময়েই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি মাদ্রাসা। তার নাম দেওয়া হয় ‘তালেবান’। যার উদ্দেশ্য ছিল, আফগানিস্তানের ধর্মীয় শুদ্ধিকরণ করে তাকে প্রকৃত ইসলামি আমিরাত হিসেবে গড়ে তোলা। তালেবানের যাত্রা তখন থেকেই শুরু। আর এর ঠিক পাঁচ বছরের মাথাতেই সাফল্য আসে তালেবানদের।

নামের সঙ্গে ‘পণ্ডিত’ থাকলেও তার মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের পাণ্ডিত্য বা শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও সরকারি প্রশংসাপত্র পাওয়া যায় না। তবে দেশের হয়ে তিনি যুদ্ধ করছেন কিশোর বয়স থেকে। আশির দশকে সোভিয়েতের নিয়ন্ত্রণে চলা আফগান শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি আফগান মুজাহিদিনের সদস্য হয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর