প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য, রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আমিও সেই রক্ত দিতেই বাংলাদেশে পা রেখেছি। মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখেছি। কিন্তু কোনোদিন আমি ভীত হইনি, ভীত হবোও না। কারণ আমি তো প্রস্তুত।’
সোমবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমি তো জানি, যে কোনো মুহূর্তে আমাকে চলে যেতে হবে। যতটুকু সময় আছে দেশের জন্য কতটুকু করতে পারি, সেটাই বড় কথা। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার বাবা, মা, ভাইয়ের আত্মা যেন শান্তি পায়, সেটাই আমি চাই।’
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে কারবালার সঙ্গে তুলনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য যখন কোনো হত্যাকাণ্ড হয়, তখন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান শুধু তাদেরকেই হত্যা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটল, যা একমাত্র কারবালার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। সেখানে শিশু-নারী কাউকেই খুনিরা রেহাই দেয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে এলেন। আর তখন থেকেই শুরু হলো ষড়যন্ত্র। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। একটা চেষ্টা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরানোর। সেই চেষ্টা যখন সফল হলো না তখন তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটালো।’
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘কারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল? কে ছিল এর পেছনে? যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, যারা হত্যাকারীদের পাশে ছিল, আর যারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, সবাই সমানভাবে দোষী। অনেক ঘটনা জানি। আগে হত্যার বিচার করাটা খুবই জরুরী ছিল, সেটা করেছি। যারা জড়িত ছিল, ধীরে ধীরে একদিন তারাও বের হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।’
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের বিচার হয়েছে। পলাতদের মধ্যে ডালিম প্রথম থেকেই পাকিস্তানে আছে। রশীদ পাকিস্তান ও লিবিয়া এই দুই জায়গায়ই থাকে। পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে মাঝেমাঝে ডালিম কেনিয়া বা অন্যান্য দেশেও যায়। নূর কানাডায় আর রাশেদ আমেরিকায়। মোসলেহউদ্দিনের খোঁজ মাঝেমাঝে পাওয়া যায়। পাকিস্তানকে বহুবার বলা হয়েছে, তারা স্বীকারও করেনা, দেয়ও না। নূরকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময় কানাডার হাইকমিশনার ছিল মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে। সে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেটা সে করেনি। তবে আমাদের প্রবাসী বাঙালি ও আমরা চেষ্টা করছি তাকে ফিরিয়ে আনতে।’
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।